লবণের দাম দ্বিগুণ, বিপাকে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

সংগৃহীত ছবি

লবণের দাম দ্বিগুণ, বিপাকে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

নাটোর প্রতিনিধি

ঈদের দিন থেকে নাটোরের আড়তগুলোতে আসছে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া। আশে পাশের দু-একটি জেলা থেকে থেকে চামড়া আসা শুরু করেছে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে কাঁচা চামড়া কিনে লোকসান গুনছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। কেননা চামড়ার দাম কমলেও লবণের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেশি পড়ছে।

এতে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। শঙ্কায় আছেন লোকসানের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের দিন থেকেই নাটোর স্টেশন বাজার সংলগ্ন কাঁচা চামড়ার মোকাম হিসেবে খ্যাত চকবৈদ্যনাথ বাজারে কাঁচা চামড়া আসা শুরু করেছে। চামড়ার সংরক্ষণের জন্য লবণজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা।

আবার রাজশাহী অঞ্চল এবং আশেপাশের জেলা থেকে নাটোর মোকামে আসতে শুরু করেছে লবণযুক্ত কিছু চামড়া।

এখানে প্রায় দেড় শতাধিক আড়ত রয়েছে। এসব আড়তের মালিকেরা সাড়ে ৫শ থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত দামে কোরবানি পশুর চামড়া ক্রয় করছেন। এছাড়া ছাগল-বকরির চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। আর লবণযুক্ত চামড়া বিক্রয় হচ্ছে ১শ টাকায়। তবে চামড়া ক্রেতাদের দাম নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও বিক্রেতারা বলেছেন, অল্প দামে কেনা-বেচা হয়েছে কোরবারির পশুর চামড়া।

রাজশাহী বাঘা এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী মহিদুল হোসেন বলেন, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই বেশি দামে কিনেও চামড়া বেশি দামে
বিক্রি করা সম্ভব না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের উপরে টার্গেট করে পশুর চামড়া কিনতে হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ গরুর চামড়া কিনেছেন ১ হাজার টাকায়। আর সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায়। এছাড়া ছাগলের চামড়া কিনেছেন ৩০ টাকায়। বকরির চামড়া কিনেছেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ ও আড়তদারেরা জানান, গত দুই মৌসুমে নগদে বেচাকেনা হলেও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনো বকেয়া প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। তারপরও ধারদেনা করে চামড়া কিনতে প্রস্তুত পুঁজি হারানো অনেকেই। তবে শেষ সময়ে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা।

নাটোর শহরের চালপট্রি এলাকার মৌসুমি চামড়া শাহ আলম বলেন, ৫ থেকে ৭ বছর আগেও ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে তারা ২ হাজার থেকে আড়াই ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতেন। চামড়ার সেই সুদিন এখন আর নেই। এখন চামড়া কিনতে হয় ভয়ে ভয়ে, যদি বিক্রি না করতে পারি।

স্থানীয় আড়তদার খাইরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকের মজুরি ও লবণের দাম বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তাদের চামড়ার দাম অনেক বেশি পড়েছে। চামড়া থেকে লবণের দাম বেশি। ছোট চামড়ায় ৫ কেজি ও বড় চামড়ায় ১০ কেজি লবণ লাগে। লবণের এতো দাম হয়েছে যে চামড়া বাঁচানো দায় হয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী মুঞ্জুর-উল আলম হিরু বলেন, লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবছর ক্ষতির আশঙ্কা করছি। গত বছর দর ছিল ৭০০-৭৫০, এবার চলছে ১২০০-১২৫০ টাকা।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হবে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি জন্য। আর গত দুই বছর ট্যানারি মালিকরা নাটোর থেকে নগদ টাকায় চামড়া কেনায় চলতি বছর ৮ লাখ পিস গরুও ১০ লাখ পিস ছাগলের চামড়া নাটোরে সরবরাহ হবে জানান তিনি।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান মকসেদ আলী বলেন, এবার আশা করছি ৫ থেকে ৬ লাখ গরুর চামড়া এবং ৮-১০ লাখ ছাগলের চামড়া আমদানি হবে।

এদিকে, চামড়া পাচাররোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ কঠোর নজরদারি করবে প্রশাসন। নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁইয়া বলেন, চামড়া পাচারের বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে সকল ধরনের পুলিশী টহল থাকবে।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর