বাগেরহাটে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘর

বাগেরহাটে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘর

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে নিন্মচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ থেকে ২০ মেন্টিমিটারের অধিক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা পোর্ট পোরসভার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

পানগুছি নদীর পানি তোড়ে মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক ধসে গেছে। ভাঙ্গন হুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী ২৫ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, বাড়িঘর, বাজার, ১২ মিটার বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে ভারী বর্ষণে জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে তিনদিন ধরে তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে রয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে আগে যেখানে জলোচ্ছাস বন্যায় পানি উঠতো, এখন সেখানে স্বাভাবিক জোয়ারেও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের সড়কও তিনদিন ধরে দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে রযেছে। বুধবার থেকে দিনে দু’বার করে এভাবে তলিয়ে থাকছে সুন্দনবর।
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে থাকায় সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রল হারণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কি ঘটেছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

এদিকে, মেরেলগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী পঞ্চকরন ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা, বারইখালীর চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান মহারাজ, হোগলাবুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান ও বহরবুনিয়ার চেয়ারম্যান রিপন হোসেন তালুকদার বলেন, গত তিন দিনের পানির চাপে নদীর তীরবর্তী তাদের ইউনিয়নগুলো অনেক সড়ক ভেঙে গেছে। দেবরাজ পঞ্চকরন বেড়িবাঁধ হুমকির
মুখে পড়েছে। এভাবে এক সপ্তাহ পানির চাপ থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক ধসে গেছে।

সাইনবোর্ড- শরণকোলা আঞ্চলিক মহাসকের মোড়েলগঞ্জের ছোমবাড়ীয়ায় সড়ক বিভাগের ফেরীর পল্টুন পানিতে প্লাবিত হওযায় যানবাহন চলাচর ব্যহত হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা পানিউন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, বাগেরহাটের বলেশ্বর, পানগুছি, পশুর, দড়াটানা, ভৈরবসহ অধিকাংশ নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ থেকে ২০ মেন্টিমিটারের অধিক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেড়ীবাধেঁর বাইরে থাকা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা পোর্ট পোরসভার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জ শহর সংলগ্ন রামপাল-মোংলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রানালয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে। পানগুছি নদীর ভাঙন হতে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলার নিম্নাঞ্চলকে প্লাবিত হওয়ার হাত
থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। সুন্দরবনে আগে যেখানে জলোচ্ছ্বাস বন্যায় পানি উঠতো, এখন সেখানে স্বাভাবিক জোয়ারেও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের উঁচু সড়কও তিনদিন ধরে দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এখানে যদি দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে যায় তবে গোটা সুন্দরবনের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই অবস্থায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের কি অবস্থা হয়েছে তা আমরা জানি না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গাছ ও ৮০টি পুকুরের উঁচু পাড় ও বন বিভাগের অফিস এলাকায় আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণীদের রক্ষায় মাটির উঁচু ১২টি টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

news24bd.tvতৌহিদ