‘উন্নয়নকাজের জন্য পেনশন স্কিম থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে’

সংগৃহীত ছবি

পরিকল্পনামন্ত্রী

‘উন্নয়নকাজের জন্য পেনশন স্কিম থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে’

অনলাইন ডেস্ক

সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে সরকারের ঋণের আরেকটি উৎস বলে বর্ণনা করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নকাজের জন্য পেনশন স্কিম থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে। ’ 

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে সামাজিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান, এমপি এসব কথা বলেন। ডেমোক্রেসি ফর ডিবেট (ডিএফডি) আজকের এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএফডি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

পেনশন স্কিম থেকে ঋণ নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নকাজে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হয়। পেনশন স্কিম চালুর ফলে ঋণ নেওয়ার আরও একটি উৎস যোগ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিলে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে আসবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় প্রকল্পের কারণে বর্তমানে দেশের অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতিও বাড়ছে। দেশে উচ্চবিত্ত পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে। কেউ কেউ ব্যাংকের বড় অঙ্কের টাকা লোপাট করে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছেন। ব্যাংকিং খাতেও প্রভাবশালীরা অর্থ লুটপাটের ঘটনায় জড়িত। একটি অংশ ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় আনা উচিত। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘যারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে নির্বাচনী তহবিল জোগানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, তাঁদের সমালোচনা যথার্থ নয়। পেনশন খাতে জমাকৃত অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। এর জন্য সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। ’

এদিকে সমালোচনা আছে যে, সরকারের কোষাগার খালি হওয়ার কারণেই এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে। পেনশন স্কিমকে মানুষের টাকা চুরির নতুন ফন্দি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য প্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, 'পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ট্রেজারি বন্ড, লাভজনক অবকাঠামোতে পেনশন স্কিমের টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি যাতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে বাধা না হয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই পেনশন পেতে হেনস্তার শিকার হতে হয় কিনা সে ব্যাপারেও জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। অনেকে মনে করেন মূল্যস্ফীতির হিসেবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম খুব একটা লাভজনক নাও হতে পারে। সমতা স্কিমের আওতায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ৫০ শতাংশ চাঁদা প্রদানের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। সমতা স্কিমে যাদের আয় বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা তারা ৫০০ টাকা দিলে সরকার ৫০০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করবেন। বেসরকারি চাকুরিজীবিদের জন্য প্রগতি স্কিমে প্রতিষ্ঠান চাইলে চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করতে পারবে। তবে প্রগতি স্কিমে মালিক পক্ষের চাঁদা দেয়ার বিষয়টি শ্রমআইনে অন্তর্ভূক্ত করে নির্দেশনা প্রদান করলে বেসরকারি চাকুরিজীবিরা উপকৃত হবে। '  

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনাকে টেকসই ও আরো জনবান্ধব করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ করেন: 

১) স্কিমে অংশগ্রহণ করতে হলে পূর্বের সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এই শর্ত বাতিল করা উচিত।  
২) শ্রমজীবী মানুষের জন্য টানা ১০ বছর চাঁদা প্রদানের বিষয়টি শিথিল করা উচিত।  
৩) চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে নমিনির পেনশনের এর অর্থ বুঝে পাবার মেয়াদ ৭ বছর এর স্থলে ৩ বছর করা উচিত।  
৪) একজন সুবিধাভোগী জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ঋণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ উত্তোলন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের নিবন্ধিত ব্যক্তি জরুরী প্রয়োজনে জমাকৃত চাঁদা যাতে একবারে উত্তোলন করা যায় তাঁর বিধান রাখা।  
৫) সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এখন পর্যন্ত শুধু সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাহকের সুবিধার্থে তারা যাতে নিজ নিজ ব্যাংকের মাধ্যমে এই স্কিমে নিবন্ধন করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা।  
৬) সারাদেশে সমাজসেবা দপ্তর, জেলা তথ্য অফিস, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের  কুটনৈতিক মিশনগুলোকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য সম্পৃক্ত করে এই পেনশন স্কিম গ্রহণে উৎসাহিত করা।  
৭) শ্রমজীবী ও ক্ষেতমজুরসহ একেবারেই হত দরিদ্র মানুষের জন্য জমাবিহীন পেনশন স্কিমের ব্যবস্থা করা।  
৮) যাতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ধর্মীয় কোনো অপপ্রচার করা না হয় তার জন্য আলেম ওলামাদের সম্পৃক্ত করে পরামর্শ করা।  
৯) টানা ৩ মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পেনশন স্কিম স্থগিত হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম মাস বাদ দিয়ে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য চাঁদার ১ শতাংশ অর্থাৎ প্রতিদিনের জন্য হাজারে ১০ টাকা জরিমানা দিয়ে স্কিম চালু করা যাবে। এতে বন্ধ থাকা স্কিম চালুর জন্য জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। তাই জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে প্রতি হাজারে ১০ টাকার পরিবর্তে ২ থেকে আড়াই টাকা করা।  
১০) প্রগতি স্কিমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীর পক্ষে অর্ধেক চাঁদা প্রদানের বিষয়ে শ্রম আইনে নির্দেশনা প্রদান করা।

প্রতিযোগিতায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দলকে পরাজিত করে সরকারি তিতুমীর কলেজ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক শেখ নাজমুল হক সৈকত, সাংবাদিক জাকির হোসেন ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।  
news24bd.tv/AA