‘দেশে প্রতিবছর কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় অর্ধলাখ মানুষ’

প্রতীকী ছবি

‘দেশে প্রতিবছর কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় অর্ধলাখ মানুষ’

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর কিডনি বিকল হচ্ছে ৪০ হাজার মানুষের। কিডনি বিকল এসব রোগীর ৭৫ ভাগই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের চিকিৎসার অভাবে। প্রতিবছর কিডনি বিকল হয়ে অর্ধলাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

কিডনি রোগে আক্রান্তদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য জেলা পর্যায় ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা রাখা এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজে কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা রাখা দরকার। এর সঙ্গে সঙ্গে কিডনির রোগ বিশেষজ্ঞ, ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগ বিশেষজ্ঞ ও নার্সদের উচ্চতর ট্রেনিং বিশেষভাবে প্রয়োজন। পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য বীমার ওপর।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত কিডনি ফাউন্ডেশনের দুইদিনব্যাপি ১৯তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের কিডনি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছেন।

কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এবং টেকনোলজি, ঢাকার চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।  

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের নেফ্রোলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দীন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল, ইউকের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব, জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ, ভারত এবং গ্লোবাল হেলথ এর চেয়ার ফ্যাকালটি অব  ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক বিবেকানন্দ জা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মেজর  জেনারেল (অব.) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমে, কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন রুবেল প্রমূখ। সম্মেলনে দেশ বিদেশের খ্যাতিমান কিডনি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞরা অংশ গ্রহণ করেন। আগামী ১ অক্টোবর এই সম্মেলন শেষ হবে বলে জানা গেছে।

অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান বলেন, প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিমের মতো একজন সফল ব্যক্তির হাত ধরে এদেশে ডায়াবেটিস রোগীরা নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছে। তার উত্তরসূরি হিসাবে এই রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ দেশে ও বিদেশে তৃনমূল থেকে শহর ও নগরে পৌঁছে দেয়ার কাজ করছি। এ ধরণের সেবা অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও অনুসরণ করলে মানুষের ব্যাপক উপকার হবে। তিনি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা, গবেষণা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।  

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে কিডনি রোগ ও কিডনি অকেজো রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুটো কিডনি অকেজো হয়ে গেলে রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন করতে হয়। বাংলাদেশে এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এজন্য কিডনি রোগের বিস্তার রোধে বাংলাদেশে উচ্চত্তর শিক্ষা ও গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।  

অধ্যাপক নিজামউদ্দীন চৌধুরী বলেন, কিডনি রোগের বিস্তার এবং এর ভয়াবহতার আলোকে সবার আগে এই রোগ প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।  

অধ্যাপক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব বলেন, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক কিডনি সমিতির হাসপাতালের সঙ্গে রেনাল সিস্টার সেন্টার প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কিডনি রোগীর উন্নত চিকিৎসা দেওয়ায় গবেষণা সহায়তা দেওয়া এবং কিডনি বিশেজ্ঞদের উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।  

অধ্যাপক বিবেকানন্দ জা বলেন, আমরা নন কমুনিকেশন ডিজিজের উপর গবেষণা করে যাচ্ছি। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর আগ্রহ রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে নেফ্রাইটিস বা প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গত হওয়া, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া প্রস্রাবে সংক্রমণ, পাথরজনিত রোগ, জন্মগত কিডনির রোগ, ওষুধজনিত কিডনির রোগ, ভেজাল খাদ্য, পলিসিস্টিক কিডনির রোগ অন্যতম।

এই রকম আরও টপিক