সহজ পন্থা অবলম্বনে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা

প্রতীকী ছবি

সহজ পন্থা অবলম্বনে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা

 আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)

একজন আলেম রেলগাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন। নামাজের সময় হলে তিনি গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে নামাজ পড়তে চাইলেন। সহযাত্রীরা বলল, মাওলানা! এই স্টেশনে গাড়ি বেশিক্ষণ থামবে না। আপনি ভেতরেই নামাজ পড়ুন।

তিনি বললেন, এটা কেমন কথা যে আমি চলন্ত গাড়িতে নামাজ আদায় করব! গাড়ি থাকুক বা যাক আমি নিচে নেমেই নামাজ আদায় করব।

সব যুগেই এমন কঠোর প্রকৃতির গোঁড়া কিছু মানুষ থাকে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আল্লাহ মানুষকে যে অবকাশ দিয়েছেন এবং ইবাদত আদায়ের যে সহজ পদ্ধতি বলে দিয়েছেন তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে আজিমত তথা স্বাভাবিক অবস্থার মতো দৃঢ়তার সঙ্গে তা পালন করাই শরিয়তের মূল উদ্দেশ্য। এতে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

বিপরীতে কেউ সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করলে সওয়াব কমে যায়। সুতরাং তারা শরিয়তের অবকাশ গ্রহণ করে না, সহজ পদ্ধতিতে আমল করে না। তারা মনে করে, সহজ পদ্ধতি কেবল অসুবিধার সময় সাধারণ মানুষের জন্য, যেন তারা শরিয়তের কঠোরতার কারণে মন ছোট না করে। আমরা বিশেষ লোক, আমরা কেন দুর্বলদের পদ্ধতি অবলম্বন করব।

এটা তাদের মহা ভুল। এই ধারণা ফিকহশাস্ত্রের ভাষ্যের বিপরীত। যদিও কারো কারো মতে, বিশেষ লোকদের জন্য রুখসত বা অবকাশ গ্রহণের চেয়ে আজিমত অনুসারে আমল করা উত্তম। তবে আমার মতে, বিশেষ লোকদের জন্যও রুখসতের ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী আমল করা আজিমত অনুসারে আমল করার চেয়ে উত্তম। কেননা বিশেষ শ্রেণির কাজগুলো সাধারণ লোকেরা অনুসরণীয় মনে করে।

তাই তারা যদি রুখসতের ক্ষেত্রে রুখসত অনুসারে আমল না করে আজিমত অনুসারে আমল করে, তাহলে মানুষ মনে করবে আজিমত অনুসারে আমল করাই শরিয়তের মূল নির্দেশ। কেবল আরামের জন্য আমাদের সহজ পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়তো এতে সওয়াবের পরিমাণ কম। এতে মানুষের জন্য শরিয়ত পালন করা কঠিন হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তাঁর দ্বিনকে সহজ করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম বান্দা। আল্লাহর নির্দেশ পালনে তিনি নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করতেন না। তাঁর কর্মপন্থা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুটি বিষয়ের মধ্যে অবকাশ দেওয়া হলে তিনি সহজটা গ্রহণ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৮৬)

একদল সাহাবি স্বাভাবিক ও জীবনের সহজ ধারার পরিবর্তে কঠোর তপস্যার নিয়ত করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের কী হলো যে আমি যে কাজ করি তা থেকে দূরে থাকে? আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আল্লাহ সম্পর্কে তাদের চেয়ে আমার জ্ঞান অনেক বেশি এবং আল্লাহকে তাদের চেয়ে আমি বেশি ভয় করি। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১০১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবাদতের ক্ষেত্রে রুখসত বা অবকাশ গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরও তা গ্রহণ করতে বলতেন। তাহলে আমরা কোথাকার কে যে রুখসত অনুসারে আমল করাকে নিজের জন্য অনুপযুক্ত মনে করি!

মাওয়াইজে আশরাফিয়া থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর