তরুণদের আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাপিত জীবন

সংগৃহীত ছবি

‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’

তরুণদের আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাপিত জীবন

অনলাইন ডেস্ক

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত লেটস টক অনুষ্ঠানের পর আরও একবার ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে তরুণদের সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা প্রায় ২৫০ জনের বেশি তরুণ-তরুণীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দেশ গঠনে এগিয়ে আসা তরুণ, চেঞ্জমেকার, ইনফ্লুয়েন্সার, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ট্রান্সজেন্ডারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এবারের আয়োজিত অনুষ্ঠানে উঠে আসে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে সব পক্ষের ভাবনা।

বিভিন্ন ইস্যুতে তরুণদের কথা শোনেন ও প্রশ্নের জবাব দেন সরকারপ্রধান।

সেই প্রশ্ন এবং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উত্তর জেনে নেওয়া যাক এক ঝলকে...  

প্রশ্ন: পুরো বাংলাদেশ থেকে তরুণ-তরুণীরা হাজির হয়েছে এ অনুষ্ঠানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে কেমন লাগছে আপনার এ অনুষ্ঠানে এসে?

প্রধানমন্ত্রী: অনেক ধন্যবাদ এ সুযোগটা দেওয়া জন্য । আমি এটুকই বলবো, আসলে আমার নাতি-নাতনিরা তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে বিদেশে থাকে।

আমি তাদের পাই না। তো আমি আজ এক ঝাঁক নাতি-নাতনি পেলাম এ অনুষ্ঠানে এসে।

প্রশ্ন: আপনার ভাষায় একটু বলবেন স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? আপনার স্বপ্নটা কী?

প্রধানমন্ত্রী: আমরা তো আসলে কম্পিউটার শিক্ষাটা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জোর দিচ্ছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম, আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রযুক্তি শিক্ষাটা যাতে নেয়। তখন বিজ্ঞানের প্রতি এতো আগ্রহ ছিল না, আমরা কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছি। আমরা সারা বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিচ্ছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এছাড়া এখন ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। আমরা ফোর-জি ব্যবহার করছি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভেল্টের জন্য ফাইভ-জির দিকে যাচ্ছি। এসব কাজ আমরা করে ফেলেছি।

তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপটা কী হবে? সেখানেও আবার আমার ছেলে বুদ্ধি দিল, আমরা এবার স্মার্ট বাংলাদেশ করব। স্মার্ট বাংলাদেশের কনসেপ্ট হলো, আমাদের যারা ছেলে-মেয়ে আছে, তারা যেন শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশাপাশি সরকারকেও স্মার্ট সরকার গঠন করতে হবে।

প্রথম সরকারে এসে দেখেছি একটা কম্পিউটার সাজানো আছে। ওটা কেউ ছুঁয়ে দেখে না। কিন্তু এখন তো আর সেটা না। আমাদের সব মোবাইল ছিল এনালগ। একটা ফোনের দাম ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। আমি যখন সরকারে আসলাম, আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এটাক উন্মুক্ত করে দিবো। তখন আমরা বেসরকারি সেক্টর উন্মুক্ত করে দিলাম। এখন মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার ব্যবহার। স্কুল থেকে শুরু করে দিলাম। ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছেলে মেয়েদের শেখানো শুরু করলাম।

আমরা চাচ্ছি আমাদের সরকারের সব কাজ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে করব। যাতে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার এবং আমাদের ইকোনমিও হবে স্মার্ট ইকোনমি। অর্থাৎ, আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কাজগুলো চালাব। এতে আমাদের কর্মঘণ্টা বাঁচবে। যোগাযোগ যাতায়েতে সমস্যা হবে না। সেইসঙ্গে আমি চাই, আমাদের সোসাইটির সবাই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করুক। এখন তো পেনশন থেকে শুরু করে বিল দেওয়া পর্যন্ত সব কাজ অনলাইনে করছে। এমনকি আমি যে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি করেছিলাম তা আমরা সেগুলো অনলাইনে দিয়ে দিই। এখন আমাদের ৬ লাখ ৮০ হাজার ছেলে মেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করে। একসময় তারা সমস্যায় পড়ত। তাদের ব্যাংকগুলো জিজ্ঞেস করতে এত টাকা কোত্থেকে আসে? এ নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ডেকে বিষয়টি সহজ করে দিতে বললাম। এছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন ও স্বীকৃতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

পাশাপাশি আমি বক্তব্যে এটা নিয়ে বলতে শুরু করলাম। এটাকে আরও জনপ্রিয় করার জন্য যে এটাও একটা ইনকামের সুযোগ। তবে কোভিড-১৯ এর অতিমারির সময় এই ডোরটা ওপেন হয়ে গেল। তখন আমিও বসে বসে আমার সব মিটিং ভার্চুয়ালি করেছি। ৪১-এর বাংলদেশে আমাদের সব ছেলে মেয়ে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করবে এবং যত প্রযুক্তি আসবে তা শিখে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: ২০৪১ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আমাদের জায়গাটা কোথায় হবে এবং আপনার প্রত্যাশা আমাদের কাছে কী?

প্রধানমন্ত্রী: আমি এখানে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি। নারী-পুরুষ ট্রান্সজেন্ডার যারাই হোক, সবাই আমাদের সন্তান। প্রত্যেকটা পরিবার তদের গ্রহণ করবে। আমি চাই তারাও একটা অধিকার নিয়ে সমাজে দাঁড়াবে এবং সেইভাবে কাজ করবে। সেই অবস্থাটাই আমরা সৃষ্টি করেছি। সেভাবে আমি স্বীকৃতি দিয়েছি। আমার এটাই আকাঙ্ক্ষা, সবাই যার যার মেধাশক্তি মননকে ব্যবহার করে দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারবে সেই চিন্তা থাকতে হবে।

প্রশ্ন: ট্যুরিজম সেক্টর নিয়ে সরকারের কোনো বড় পরিকল্পনা রয়েছে কি না? বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টর নিয়ে যদি কোনো স্বপ্ন থাকে সে সম্পর্কে জানতে চাই..

প্রধানমন্ত্রী: আমাদের চা বাগান থেকে শুরু করে আমাদের সমুদ্র সৈকত... কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে দীর্ঘ একটা সমুদ্র সৈকত। এটা হচ্ছে স্যান্ডি বিচ। বালুকাময় এই সৈকত ডেভেলপ করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। কক্সবাজার নিয়ে আমার ইচ্ছা আছে, আমরা যদি বিদেশি পর্যটক আনতে চাই সেটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা। আমার একটা প্ল্যান আছে যে, আমরা বাইরের কোনো দেশকে একটা অংশ দেব তারা ওখানে ইনভেস্টমেন্ট করবে। সেটা শুধু বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাহলে বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশে আসবে। এখনও আসে কিন্তু তারা ওই সুযোগটা পায় না। আরেকটা বিষয় নিয়ে নেপালের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে।  যৌথভাবে কীভাবে ট্যুরিজমটা উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি।  এমনকি মালদ্বীপের সঙ্গেও আমরা নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি।

আমরা করে যাচ্ছি, তবে আমাদের আরও পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। আর তোমদের মতো তরুণ প্রজন্মরাও এ নিয়ে ধারণা দাও। তোমরা পরিকল্পনা করবা, আমি সেটাই চাই।

প্রশ্ন: মানবাধিকার ইস্যু বা অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। আবার ফিলিস্তিনিদের বেলায় তারা নিশ্চুপ। যুক্তরাষ্ট্রের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডকে আপনি কীভাবে দেখেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কীভাবে দেখেন?

প্রধানমন্ত্রী: আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ তো একমাত্র গ্যাস। আমি যখন ৯৬ সালে সরকারে আসি তখন ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার দিয়ে অনেক কোম্পানি আসে। আমেরিকান কোম্পানিও এখানে তখন গ্যাস উত্তোলন করে। তখন একটা প্রস্তাব আসল যে, এই গ্যাস বিক্রি করে দিতে হবে। আমি এতে আপত্তি করলাম। সেই আপত্তি করার খেসারত আমাকে দিতে হয়েছে। ২০০১ এর নির্বাচনে আমাকে আসতে দেওয়া হয়নি। আমার দেশের ভেতর আর বাইরের চক্রান্ত এক হয়ে গেল। তো এরকম কিছু ব্যাপার আছে। এরা সবসময় হস্তক্ষেপ করতে চায়।

আজকে মানবাধিকার কথা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা তোলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো নিজের দেশের দিকে তাকায় না, জাতিসংঘে আমি ফিলিস্তিনি ইস্যুটা তুলেছিলাম। ইইউতেও আমি যখন গেলাম, তখন খুব শক্তভাবে এই প্রশ্নটা তুলেছিলাম, ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের মারা হচ্ছে, এখন কেন সবাই চুপ? এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই-দুইবার যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে প্রস্তাব আসে তাতে আমেরিকা ভেটো দিল। আমেরিকায় মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই কিন্তু তারা অন্য জায়গায় এসে খবরদারি করে। এই মোড়লিপানা তাদের কে করতে দিল আমি সেটা জানি না। আমি এই বিষয়টা সবার আগে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছি এবং প্রতিবাদও করেছি।

তারা আমাদের শ্রম অধিকারর নিয়ে কথা বলে। তাদের ওখানে কর্মীরা একটা স্ট্রাইক করলে সবগুলোকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। এতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু অন্য দেশের বেলায় নাক গলায়। ইরানে শাহ পালভীর যখন পতন হয় তিনি একটা কথা বলেছিলেন, আমেরিকা যার বন্ধু হবে তার শত্রু লাগবে না। হাজার হাজার যুবক ইউক্রেনে জীবন দিয়েছে। রিফিউজি হয়েছে কত মানুষ। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে তাদের টাকা নাই দিতে পারবে না, করতে পারবে না সহায়তা। তাহলে যুদ্ধটা বাঁধাল কেন? এই উস্কানি তারা দিল কেন?

রাশিয়ার এই আক্রমণ আমরা সমর্থন করিনি। জাতিসংঘে আমরা খুব হিসেব করে পা ফেলি। কারণ আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। কিন্তু ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্ট্যান্ড আবার ওইদিকে ফিলিস্তিনি শিশুদের হাসপাতালে বোমা ফেলা। সাধারণ মানুষকে বোমা ফেলে হত্যা করা বন্ধ না করে তারা ইসরায়েলকে উল্টো আরও অস্ত্র কেনার টাকা দিচ্ছে। এদের মানবাধিকারের ডেফিনেশন কী সেটাই আমরা বুঝলাম না । পৃথিবীও মনে হয় এটা বুঝতে পারেনি। তবে সারা বিশ্বে এ ব্যাপারে সচেতন।

আমি জানি, ২০০১ সালে গ্যাস না দেওয়ার পর তারা ঝামেলা করেছিল। তবে জনগণ এখন সচেতন। তারপরেও কারও সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে ক্ষমতায় যেতে হবে ওই চিন্তা আমি করি না। ওরা তো লেগেই আছে আমার বিরুদ্ধে সারাক্ষণ, তাতে কিছু আসে যায় না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। তারা ইলেকশনের ব্যাপারে অনেক কথা বলে। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়, এই যে বিএনপি ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-শিশু পুড়িয়ে ফেলল, এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ। এদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এদের নিজেদেরই একসময় খেসারত দিতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা।

প্রশ্ন: এখনো ৪৫ শতাংশ নারী সন্তান জন্মের পর পর কর্মক্ষেত্র থেকে অব্যাহতি নেয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কী এমন কোনো পরিকল্পনা আছে যেখানে বৃহৎ পরিসরে সরকারি উদ্যোগে ডে-কেয়ার সুযোগ প্রদান করা হবে?

প্রধানমন্ত্রী: আমি ক্ষমতায় আসার পর ৯৬ সালে সচিবালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার করে দিই। আমি নিজে টাকা দিয়ে খেলনা-টেলনা কিনে দিয়ে ডে সেন্টারটা করে দিই। এখন আমরা যতগুলো প্রজেক্ট পাস করি। সব জায়গায় কিন্তু ডে-কেয়ার সেন্টারের কথা বলা আছে। যেসব গার্মেন্টস উন্নতমানের সবগুলো ডে-কেয়ার সেন্টার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আমাদের এয়ারপোর্ট হেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে আমরা ডে-কেয়ার সেন্টার করে দিচ্ছি। এটা ছিল আমাদের পরিকল্পনা।

সরকারি হোক, বেসরকারি হোক - আমার কথা হচ্ছে সব জায়গায় ডে-কেয়ার সেন্টার থাকতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করে দিয়েছি যেটা ছিল তিন মাস। আর কর্মজীবী মায়েদের জন্য আমি আলাদা একটা ভাতা দিয়ে থাকি। যে মা বুকের দুধ খাওয়ায় তার জন্য আলাদা ভাতা দিই যাতে সন্তানের পুষ্টিটা ঠিক থাকে। আমরা কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এ ব্যবস্থাটা করে আসছি।

প্রশ্ন: জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কী করার আছে আর যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

প্রধানমন্ত্রী: ২০০৯-এ সরকারে আসার পর কোপ-১৫ এ কোর কমিটির সদস্য ছিলাম আমি। ওখান থেকে আসার পরই আমরা নিজস্ব একটা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি এবং অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশন প্রোগ্রাম করে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। সেইসঙ্গে আমরা মুজিব বর্ষে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান করেছি। এই যে ড্যামেজ হবে ড্যামেজ হবে আমরা বলছি, এই ড্যামেজ কীভাবে উন্নয়নে নিয়ে আসবে আমরা সেই চেষ্টা করি। আমরা আইন ও নীতিমালা করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। যেমন: সমগ্র উপকূল অঞ্চলে গ্রিন বেল্ট করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আর যতগুলো প্রজেক্ট নিই সবগুলোতে আমরা কিন্তু বৃক্ষরোপন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত-অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই।

আমার দলের পক্ষ থেকে ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে একটি প্রোগ্রাম করে আসছি, সেটা হলো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। ১৫ জুন বা পয়লা আষাঢ় থেকে পরবর্তী তিন মাস আমাদের দল ও সহযোগী দলের প্রত্যেকের ওপর নির্দেশ থাকে অত্যন্ত তিনটি করে গাছ লাগাবেন। এই প্রোগ্রামটা আমাদের নিজেরই। আমাদের অনেকগুলো প্রোগ্রাম কিন্তু নেওয়া আছে এবং নীতিমালা বিধিমালা আইন আমরা পাস কররেছি। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, কোভিড অতিমারি, স্যাংশন-পালটা স্যাংশন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তো সেখানে আমি আমার তরুণ সমাজকে বলব যে, আমাদের এক ইঞ্চি জমি খালি থাকবে না। যার যত পতিত জমি আছে সেগুলো চাষ করবে। সেখানে ফসল উৎপাদন হবে। যে যা পারে উৎপাদন করবে। যে যা পারে খাবার জিনিস তৈরি করবে যেন আমাদের যেন আমাদের কারও কাছে হাত পাততে না হয়।

আমি যখন করি আমি কিন্তু নিজেরটা আগে করি। যেমন আমার গণভবন কিন্তু রীতিমতো একটা খামারবাড়ি। পাশাপাশি আমার গ্রামের বাড়িতে যে পতিত জমি ছিল সেগুলোতে ফসল ফলাচ্ছি। আমি আমাদের যুব সমাজকে বলব, যে যেখানে পারবেন একটি করে গাছ লাগাবেন। আমাদের যুব সমাজের কাছে এটাই আমার আহ্বান থাকবে, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে আর উৎপাদন করতে হবে। কারোর থেকে যেন আমাদের হাত পেতে চলতে না হয়। জলবায়ু ইস্যুতে অনেক প্রমিস করা হয়। কিন্তু যারা আসলে ডেভেলপ হয়েছে যারা সবচেয়ে বেশি দূষণ করে তারা খবরদারি করে অন্যের ওপর। আমাদের তো কার্বন নিঃসরণ নেই, তারপরেও আমরা সচেতন। প্রতিশ্রুতি পাই অনেক, তবে কার্যকর কতটুকু হয় সেটাই দেখার বিষয়।  তবে যারা দূষণ করে তারা বেশি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় না। আমাদের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ছোট ছোট দ্বীপগুলো। সি লেভেলে উঠে গেলে অনেক দেশই শেষ হয়েছে। তাদেরকেও আমরা আমাদের অ্যাডাপটেশন প্ল্যান এ ধারণাগুলো দিই। আমি তাদেরকে বলি আপনাদের দেশের অবস্থাটা বুঝে আপনারা আপনাদের নিজেদের দেশের সুরক্ষার ব্যবস্থা করবেন।

প্রশ্ন: স্মার্ট বাংলাদেশ করলে কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি থাকে, হ্যাকিং হয়।  বাংলাদেশ ব্যাংকেও হ্যাকিং হয়েছিল। এছাড়া সরকারি সাইট থেকেও তথ্য চুরি হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে নেক্সট জেনারেশনের জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নেবেন?

প্রধানমন্ত্রী: আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স যেমন আমাদের জন্য একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে পাশাপাশি সমস্যাও সৃষ্টি করে। আর হ্যাকিংয়ের ব্যাপারে বলব, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আমাদের আসার আগে, এটা বোধহয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিয়ে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো ফায়ারওয়াল ছিল না। তাই সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এ জন্য হ্যাকিংটা হয়েছিল। যেকোনো ইস্যুতে আমাদের সিকিউরিটি ঠিক আছে কি-না, বা কোন পদ্ধতিতে করা যায় সেটা নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে।  এর বাইরে আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছি। তারপরও আমরা বলব, যারা ব্যবহার করবে তাদের সচেতন থাকতে হবে।

প্রশ্ন: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখনো নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে অবকাঠামোগত যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দূরীকরণের ক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী হতে পারে?

প্রধানমন্ত্রী: এ ব্যাপারে এরইমধ্যে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন নতুন প্রজেক্ট যা তৈরি করছি, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখছি। বিশেষ করে ট্রেনিং দেওয়া খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সংসদ ভবনের পাশে একটা মিনি স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে, সেটা শুধু মাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য। এছাড়া সাভারে একটা অ্যাকাডেমি তৈরি করে দিচ্ছি প্রতিবন্ধীদের জন্য। এছাড়া ক্রিকেট টিম বিশেষ অনুদান দিয়ে ব্যবস্থা করে দিয়েছি খেলাধুলার জন্য। সবথেকে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, প্রতিবন্ধীরা ২১টা স্বর্ণ পদক  আনল বিশেষ অলিম্পিক থেকে।

প্রশ্ন: হতাশা কীভাবে মোকামিলা করেন?  হতাশা কাটাতে তরুণদের কী পরামর্শ দেবেন? 
প্রধানমন্ত্রী: এখন কোনো কিছু হলেই শুনি বোর হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সময় এমন ছিল না। আসল কথাটা হলো আত্মবিশ্বাস। আরেকটা বিষয় হলো ডিজিটাল যুগ। আমরা যদি পাঁচজন এক জায়গায় বসি, দেখা গেল সবাই হাতে একটা মোবাইল নিয়ে বসে আছি। এর কারণে বাইরে জগত চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এর কারণে হতাশা বাড়ছে। আমরা যখন যে কাজটা করব, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করব। যাই করব, নিজের বিশ্বাস নিয়ে করতে হবে। সেই কাজে আমি যদি সফল না হই তবুও তো আমি আমার চিন্তায় করলাম। এভাবে চিন্তা করলে হতাশ হবে না।

প্রশ্ন: আপনার কাছে আপনার রান্নার করা বেস্ট আইটেম কোনটা? আপনি কী বাইরে খেতে যেতে পারেন? 
প্রধানমন্ত্রী: আমাকে সিকিউরিটির নামে বন্দি করে রাখে। আমি বলতে পারব না যে ঢাকার কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে যেতে পারছি বা খেতে পারছি। এমনকি বাইরে গেলেও একই অবস্থা দাঁড়ায়। আর রান্নার বিষয়ে বলতে গেলে, আমার ছেলে-মেয়ে, নাতিরা আমার রান্না পছন্দ করে। সেইজন্য চেষ্টা করি রান্না করতে। তারা আসলে মোরগ-পোলাও রান্না করি, মাছ রান্না করি। এছাড়া ইতালিয়ান পিজ্জা, লেজানিয়া এগুলোই করি।

প্রশ্ন: আপনি কি গ্রামে থাকতেন? সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
প্রধানমন্ত্রী: আমার জন্ম গ্রামে। আমাদের গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যেতে ঢাকা থেকে যেতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগত স্টিমারে। আমি ৮ বছর পর্যন্ত গ্রামেই ছিলাম। ৫৪ সালে ঢাকা আসি। তবে প্রত্যেক স্কুল ছুটিতে গ্রামে যেতাম। তখন বিদ্যুৎ ছিল না, খাল পুকুরের পানি ব্যবহার করতাম। ওগুলোই আমাদের জন্য আনন্দের ছিল। আমার ঢাকায় কোনো বাড়িঘর নেই। আমি গ্রামেই থাকব। এখন তো পদ্মাসেতু হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি চলে যাব।

প্রশ্ন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময়ের ব্যবস্থাপনা কোন ম্যাজিকে করেন?

প্রধানমন্ত্রী: ম্যাজিক কিছু নেই। ব্যাপারটি হলো সময় করে নেওয়া। কাজের ফাঁকেই সময় করে নিতে হয়। হ্যাঁ, খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়। আমাকে ১৭ কোটি মানুষের দায়িত্ব নিতে হয়। এছাড়া ডেভেলপমেন্ট কাজ হাতে নিয়েছি, সেগুলো করতে হয়। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যস্ততাও রয়েছে। এরমধ্যে আমার দল সব সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকে। এই যে, এখন যেমন সারাক্ষণ একটা টেনশনে থাকতে হয় জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের চিকিৎসা করে যাচ্ছি। আবার পরিবারগুলোকেও সহায়তা করতে হয়। সময় করে নিতে হবে। তরুণ সমাজের প্রতি একটা কথাই বলব, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা।

তরুণরা প্রধানমন্ত্রী হলে কী করত?

সুভাশিষ ভৌমিক, ইঞ্জিনিয়ার
আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম মেধাবীদের দেশে ধরে রাখার জন্য এমন প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দিতাম এবং প্রণোদনা রাখতাম যাতে দেশে এসে কাজ করলে এরা বড় রকমের সুবিধা ভোগ করত এবং দেশে থাকত এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করত।  

সাদিয়ে রশ্নি সূচনা, উপস্থাপক এবং শিক্ষার্থী ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস অর্ডার
আমি প্রধানমন্ত্রী হলে এই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করব, যাতে সাধারণ মানুষের সাথে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সবখানে অগ্রাধিকার পায় এবং তাদের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকা আসতে না হয়।  

আরিয়ান আরিফ, পরিচালক-মজার স্কুল 
আমি প্রধানমন্ত্রী হলে পথশিশুদের জন্য যে বরাদ্দ আসে, সেটা এমন একটা প্ল্যানিং করতাম, যাতে ১০ বছর পরেও নিখুঁতভাবে চলবে  এবং এমন একটা রিপোর্টিং সিস্টেম করতাম, যেখানে সব দায়িত্বশীলরা রিপোর্ট দিতে বাধ্য থাকতে যে কী পরিমাণ উন্নতি হয়েছে এই পথ শিশুদের। তারা মূল স্রোতে কতটা যুক্ত হয়েছে। দেশে যে বোঝা হতো, সে কীভাবে সম্পদে পরিণত হয়েছে।

news24bd.tv/SHS