গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামে জনদুর্ভোগ চরমে

গ্যাসের জন্য ফিলিংস্টেশনে লম্বা লাইন

গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামে জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আমদানিকৃত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসা-বাড়ি ও কলকারখানার গ্রাহকরা। বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর সব শিল্প কারখানা। গ্যাস নেই সব সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ৬ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে পাইপ লাইনের সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।  

চট্টগ্রামের সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের অপেক্ষায় পরিবহনের লম্বা লাইন লক্ষ করা গেছে। এ লাইন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে।

অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হতাশ গাড়িচালকরা। তারা জানান, এই শীতের মধ্যে সারারাত তারা ফিলিং স্টেশনে আছেন কিন্তু গ্যাস পাচ্ছেন না।  

তবে আজ শনিবার সকাল থেকে গ্যাসের হালকা চাপ আসতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।  

গত কয়েক মাস ধরেই গ্যাস নিয়ে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রামের মানুষ। এখন একদমই জ্বলছে না বাসাবাড়ির চুলা, কারো কারো বাসায় আছে, তবে নিভু নিভু। তাই রান্নাবান্নার জন্য লাকড়ি, কেরোসিন তেল কিনছেন নগরবাসী। মাটির চুলায় চলছে রান্নাবান্না। কারো কারো বাসায় রান্নার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় খেতে এসেছেন রেস্টুরেন্টে। এমন অনেকেই নিজে খেয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশলী মো. আবু সাকলায়েন বলেন, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালে কারিগরি সমস্যর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট কাটছে না।

গ্যাস সংকটে বন্ধ আছে অনেক শিল্প কারখানা। শিল্প ও আবাসিক খাত মিলিয়ে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সাঙ্গু ও সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালের পর থেকে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি আমদানি নির্ভর।

এদিকে, কিছুদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে শিল্প উৎপাদনে ধস নামছে। গ্যাস সংকটে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। শ্রমিকরা কারখানায় আসছেন ঠিকই কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে কাজ করতে পারছেন না। এতে কারখানা মালিকরা পড়েছেন মহাবিপদে। প্রতিদিন তাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের শিল্প-কারখানাগুলোর অবস্থাও একই। দিন দিন এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করলেও এর কোনো সুরাহা মিলছে না।

কারখানার মালিকরা বলছেন, বয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকা দরকার। কিন্তু অনেক কারখানায় চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে ১ থেকে ২ পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও শূন্যে নেমেছে। তারা বলেন, একদিকে ডলার ক্রাইসিস অপরদিকে গ্যাস সংকট চলতে থাকলে এ সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।

গ্যাস সংকটের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি যে সংকট চলছে সেটি কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হবে।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক