দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা হুজুর

ধর্ষক শিক্ষক আবুল খায়ের বেলালী (গোল চিহ্নিত), ডানে তার কক্ষ ও ব্যবহৃত কলিংবেল।

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা হুজুর

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

কোমলমতি শিশুদের ধর্ষণ শেষে কোরআন নিয়ে শপথ এবং দোজখের আগুনের ভয় দেখানো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল খায়ের বেলালী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার বিকেল তিনটার দিকে পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলায় তাঁকে জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ তথ্য নিশ্চিত করেন মামলা দুটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক ও মো. আহাদুর।

আবুল খায়ের বেলালী কেন্দুয়া পৌরশহরের একটি মহিলা কওমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাওয়ের গোনাকানি গ্রামে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, অধ্যক্ষ বেলালী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দুই শিশুকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে মাদ্রাসার আরও ছয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বেলালী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত আবুল খায়ের বেলালী মাদ্রাসাটির একটি কক্ষে থাকতেন। আবাসিক হওয়ায় ওই মাদ্রাসাটিতে বেশ কয়েকজন এতিম-অসহায় শিক্ষার্থীও থেকে লেখাপড়া করে আসছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল নয়টার দিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে অধ্যক্ষ তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে এবং ওই শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়।

এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে শিশুটির চাচা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

এদিকে, ওই শিক্ষককে আটকের পর একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী অভিযোগ তোলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বেলালী তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি কাউকে যেন না জানানো হয় সে-জন্য ছাত্রীটিকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ ঘটনায় এই ছাত্রীর বাবা শুক্রবার রাতে বেলালীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলা করেন।

এর আগে আবুল খায়ের বেলালীর ধর্ষণ নিয়ে নিজের ফেসবুকে বর্ণনা দিয়েছেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া।

তিনি লিখেছেন, ‘কি লিখব আর কীভাবে লিখব, ভাষা পাচ্ছি না। তিনি (ধর্ষক) একজন দাওরায়ে হাদীস, (সিলেট বালুরচর কওমী মাদ্রাসা থেকে) মাওলানা, একজন বক্তা, একজন ইমাম, শুক্রবারে জুমার নামাজের খতিব। মাওলানা (!!!) আবুল খায়ের বেলালী। শুক্রবার তার বয়ান শোনার জন্য আধাঘণ্টা আগে মুসল্লীরা এসে অপেক্ষা করেন মসজিদে। কেন্দুয়ার আঠারবাড়ি এলাকায় মা হাওয়া (আ.) কওমী মহিলা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) তিনি, যে মাদ্রাসায় রয়েছে প্রায় ৩৫ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রী যাদের ১৫ জন আবাসিক। সেখানে তিনিও (ধর্ষক) আবাসিক। সময় সুযোগ বুঝে তিনি কলিংবেল চাপেন আর ওনার পছন্দমত একজন কোমলমতি ছাত্রীর ডাক পরে তার গা-হাত-পা টিপে দেবার জন্য। আর এক পর্যায়ে তিনি সেই অবুঝ শিশুদের উপর ঝাপিয়ে পরেন . . . . . এবং শেষে আবার কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করান, কাউকে কিছু না বলার জন্য। '

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া আরো লেখেন, ‘ভয়ে কোমলমতি ছাত্রীরা কাউকে কিছু বলতো না। কিন্তু আজ এক সাহসী বীরাঙ্গনা সেই ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়, বলে দেয় তার বড় বোনসহ বাড়ির সবাইকে, সেই যন্ত্রণার মুহূর্তগুলোর কথা। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক হন সেই হুজুররূপী ধর্ষক। থানায় আটক থাকা অবস্থাতেই আরো একজন শিশু শ্রেণির ছাত্রীর অভিযোগ জমা পড়ে। দুইটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে তার নামে।  

শাহজাহান মিয়া লেখেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাই, গত একবছরে আরো মোট ৬ জন ছাত্রীর সাথে তিনি অনুরূপ কুকর্ম করেছেন যাদের সবারই বয়স ৮ থেকে ১১ এর মধ্যে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করি, সাথে সেই কলিংবেলটিও, যা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। হুজুরকে রিমান্ডে আনা হবে।

আরও পড়ুন: দোজখের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে হুজুর বেলালী!

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর