বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ‘অর্থ লুট ও হত্যা’ করত তারা

বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ‘অর্থ লুট ও হত্যা’ করত তারা

অনলাইন ডেস্ক

নিজেরা বাস ভাড়া করে তাতে যাত্রী তুলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিতেন তারা। ডাকাতিকালে প্রয়োজনে হত্যা করতেও পিছপা হতেন না। অবশেষে এ চক্রের দলনেতাসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয়জন ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই চক্রকে কীভাবে ধরা হয়েছে তা জানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে নিজেদের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ অক্টোবর সাভার থেকে মিরপুরের হোটেল ব্যবসায়ী লস্কর রবিউল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা। সে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে এ ডাকাত দলকে ধরেছে পিবিআই।

২২ জনের ওই ডাকাত দল গত ৫ অক্টোবর মানিকগঞ্জ থেকে বাসে যাত্রী তুলে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর রাতে নবীনগর থেকে লস্কর রবিউল ইসলামকে (৪১) গাড়িতে তোলেন। টাকা-পয়সা কেড়ে নিতে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল সাভারের বলিয়াপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন যমুনা ন্যাচারাল পার্কের ফটকের পাশে। পরদিন ৬ অক্টোবর তার লাশ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

বনজ কুমার মজুমদার জানান, ওই ডাকাত দলের দলনেতা মো. বছির মোল্লাসহ (৪২) নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- শেখ হাফিজ (৩৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আমির হোসেন (২৮), মো. আল আমিন (২৯), জুয়েল (৩২), মো. নাঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)। এদের মধ্যে বছির, আল আমিন, জুয়েল, হাফিজ, নাঈম ও আনোয়ার ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর তিন আসামি তপন, নাজমুল ও আমির হোসেনকে আজ বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজীব হাসানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মো. বছির মোল্লা। অপর পাঁচ আসামি আজ বৃহস্পতিবার রাজীব হাসান এবং জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাইরুজ তাসনিম, মিশকাত শোকরানা, শাহজাদী তাহমিদা ও কামরুন নাহারের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে রবিউলকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, ‘সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রের সদস্যদের বেশিরভাগ পেশায় পরিবহন শ্রমিক। সাভারসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন তারা। ডাকাতির জন্য তারা একত্রিত হন। এরমধ্যে কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল রুটের ‘‘নিরালা’’ পরিবহনের একটি বাস ভাড়া করেন তারা। প্রথম দিন মানিকগঞ্জ থেকে যাত্রী তুলে ঢাকা আসার পথে তাদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেন। ’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনও এভাবে ডাকাতির এক পর্যায়ে রবিউলকে বাসে তোলেন। রবিউল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করায় কয়েকজন মিলে তাকে বাসের মধ্যে ফেলে হাত-পা চেপে ধরে মাথায় ‘‘হুইল রেঞ্জ’’ দিয়ে আঘাত করে। মারা যাওয়ার পর সাভারের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের ফটকের পাশে লাশ ফেলে বছির ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে বাসায় ফোন করে সেখান থেকে লাশ নিয়ে যেতে বলেন। ’  ওই দিন রাতে সাভার থানার পাশে বাসটি দাঁড় করিয়ে রেখে তার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকেন ঘাতকরা। পরদিন বাসটি ফেরত দিয়ে যে যার মতো করে নিজের জায়গায় চলে যান।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘এই চক্রের দলনেতা বছির মোল্লা। হত্যা মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে তার সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসায় মঙ্গলবার সাভার থেকে বছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরপর গতকাল বুধবার রাতে সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সম্পর্কিত খবর