মাদরাসা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর
ফুটেজ দেখে চার ছাত্র-শিক্ষক গ্রেপ্তার

মাদরাসা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক

মাথায় টুপি, পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির ওপর কালো রঙের জ্যাকেট পরা দুজন। তাঁরা হেঁটে এসে থামলেন কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে। সেখানে তাঁরা মই বেয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের পাটাতনে। ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে সজোরে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করলেন ভাস্কর্যটি।

এরপর মই বেয়ে নেমে ধীরলয়ে হেঁটে চলে গেলেন তাঁরা।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। যে দুজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে দেখা গেছে, তাঁরা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা.) মাদরাসার ছাত্র আবু বকর ওরফে মিঠুন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)। এরই মধ্যে এই দুজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ওই মাদরাসার দুই শিক্ষক আল আমীন (২৭) ও ইউসুফ আলী (২৮)।

গতকাল রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছাত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মাওলানা মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বক্তব্য শুনে তাঁরা এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ’

গ্রেপ্তার হওয়া আবু বকর ওরফে মিঠুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর মৃধাপাড়া এলাকার সমশের মৃধার ছেলে ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়িয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে। আর মাদরাসার শিক্ষক আল আমীন মিরপুর উপজেলার ধুবাইল এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে ও ইউসুফ আলী পাবনা জেলার আমিনপুর দিয়াড় বামন্দী এলাকার আজিজুল মণ্ডলের ছেলে।

ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে।

ডিআইজি জানান, শুক্রবার রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন আবু বকর ও নাহিদ গোপনে মাদরাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে মজমপুর হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে আসেন। সেখানে বাঁশের মই বেয়ে ওপরে উঠে নাহিদের ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে তাঁরা ভাস্কর্যটির বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করেন।  

এরপর আবারও তাঁরা হেঁটে মাদরাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই দুজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ইন্ধন দেওয়ায় ওই মাদরাসার দুই শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, শুক্রবার গভীর রাতে শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে জুগিয়া এলাকায় পুলিশের একটি দল প্রাত্যহিক টহলে ছিল। এ সময় জুব্বা, টুপি ও পাগড়ি পরা দুজনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখে তারা। তখন ওই পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি। শনিবার সকালে ভাস্কর্য ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। ওই ফুটেজ দেখে পুলিশ ভাস্কর্য ভাঙচুরে জড়িত দুজনকে দেখতে পায়। তবে এই ফুটেজে তাঁদের চেহারা অনেকটা অস্পষ্ট ছিল। পরে পুলিশ জুগিয়া এলাকা থেকে পুলিশের গাড়ি দেখে পালিয়ে যাওয়া দুজনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এই ফুটেজে দুজনের মুখ স্পষ্ট দেখা যায়। পরে পুলিশ দুই জায়গার ফুটেজ মিলিয়ে দেখে ওই দুই মাদরাসাছাত্রকে শনাক্ত করে। শনিবার রাতে এই দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যে ওই দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে জেলা সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ড. শাহিনুর রহমান সহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

news24bd.tv কামরুল