১১ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে অবশেষে ধর্ষণের বিচার আর ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তানের পরিচয়ের স্বীকৃতি পেলেন কুড়িগ্রামের এক নারী।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন কুড়িগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক অম্লান কুসুম জিষ্ণু। এসময় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি খয়বর আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ধর্ষক খয়বর আলীকে (৪০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আর ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তানটির (বর্তমানে বয়স প্রায় ১০ বছর) বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব বহণ করবে বলে রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় মেয়র হলেন বিএনপি প্রার্থী
চৌগাছায় নৌকার জয়, প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জামায়াত
খাটের ওপর ব্যবসায়ীর মৃতদেহ, আলমারির টাকা-স্বর্ণ উধাও
এফ-৩৫ ও এস-৪০০ একসঙ্গে রাখা যাবে না, তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্র
মামলার বিবরণে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের এক গ্রামের দিনমজুরের কন্যাকে বিগত ২০০৯ সালের শেষ দিকে বিয়ে করেন একই গ্রামের খয়বর আলী। এই বিয়ের ২০ দিনের মাথায় তাকে তালাক দেন স্বামী খয়বর আলী। এ অবস্থায় বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন ওই নারী।
এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে ২০১০ সালের প্রথম দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১০৮/১০)। মামলা দায়েরের পর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ভুক্তভোগী ওই নারী। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষকের সঙ্গে জন্ম নেওয়া কন্যা শিশুটির বায়োলজিক্যাল সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, আদালতের বারান্দায় প্রায় ১১ বছর ধরে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এখন রায় পেয়ে সেই হতাশা কেটে গেছে। ধর্ষকের শাস্তি হয়েছে। সন্তানের পরিচয়ের স্বীকৃতি মিলেছে। এখন আসামির পরিবারের কেউ যাতে কোনও ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আদালতের কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন তিনি।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকউটর আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিলম্ব হলেও মামলার রায় সঠিক হয়েছে। এজন্য আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
তিনি আরও জানান, মামলার ৯ জন সাক্ষির মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য প্রমাণে মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক উপরোক্ত রায় দিয়েছেন। ফলে ভুক্তভোগী নারী ও তার কন্যা ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বজলুর রশীদ।
news24bd.tv তৌহিদ