বেশি আয়কর দিলে,দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে : আইনমন্ত্রী

বেশি আয়কর দিলে,দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে : আইনমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

আয়কর প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। দেশের বিত্তবান ও সম্পদশালী মানুষ এবং ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি এই আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আয়কর দিয়ে গরীব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। কারণ আপনাদের করের টাকাই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ ও পরিবহণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়। আপনারা যত বেশি আয়কর দিবেন, বাংলাদেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে।

 

আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)এর সম্মেলন কক্ষে জাতীয় আয়কর দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে "রুপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আয়করের ভূমিকা" শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের নিকট হতে সংগৃহীত করের টাকা ব্যয়ের ব্যাপারে আমাদেরকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। জনগণের করের টাকার যেন কোন অপচয় বা অপব্যবহার  না হয় এবং করের টাকার যাতে সর্বোত্তম ব্যবহার হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।  

মন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার করোনাভাইরাসের অতিমারিকালীন কর সংগ্রহের ব্যাপারে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছিলেন।

এসময় তিনি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, তেমনি জনগণের জীবন-জীবীকা ও আয়-রোজগারের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছেন। উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার বিষয়টিও তিনি মাথায় রেখেছেন।

তবে আশার কথা হলো প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনা এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা করোনার চ্যালেঞ্জ অনেকটাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে এবং উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধির ওপর। এর ফলেই ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয়কর সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৬৩%।  

তিনি বলেন, রুপকল্প ২০৪১ হচ্ছে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ নকশা, যার মূল লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এবং উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করা। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারকরণ। আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এর রাজস্ব অভীস্ট হলো ২০৩১ ও ২০৪১ সালে সরকারি রাজস্বকে মোট দেশজ আয়ের যথাক্রমে ১৯.৫৫% ও ২৪.১৫% এ উন্নীত করা। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে মোট রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদানকে ৫০% এর উপরে উন্নীতকরণ।  

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গোড়াতে ফিরে গেলে আমরা দেখতে পাই ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ছিল ৯.৭২%। এর বিপরীতে পরোক্ষ করের পরিমাণ ছিল ৯০.২৮%। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫.৫০% এবং পরোক্ষ করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪.৫০%। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে দিনদিন প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়ছে এবং পরোক্ষ করের পরিমাণ কমছে। সময়ের প্রয়োজনেই এটি হয়েছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রত্যক্ষ কর বাড়নোর বিকল্প নেই। সেজন্যই সরকার প্রত্যক্ষ কর বাড়নোর ওপর জোর দিয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ক্রমবর্ধমান ও আশাব্যঞ্জক অবদান রেখে চলেছে। আয়কর বিভাগের আন্তরিক কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় রাজস্বে  প্রত্যক্ষ করের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা এখন ৭০ লক্ষ অতিক্রম করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়া কর দাতাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও সহজ কর সেবা নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের অংশীদার হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-রিটার্ন, ই-টিডিএস সেবা ইত্যাদি চালু করেছে।  

সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও বিপুল উন্নয়ন অর্থায়নের সংস্থান করার জন্য  কর বিভাগের সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আনিসুল হক মনে করেন। বর্তমানে ডিজিটাল ইকোনমির যুগে ব্যবসার ধরণ ও প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে কর বিভাগের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন।  

আরও পড়ুন:

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর

হাফ পাস শুধুমাত্র ঢাকায় কার্যকর হবে বললেন এনায়েত উল্লাহ

কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: ৬ হামলাকারী শনাক্ত


অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান  আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন; আলোচক হিসেবে ছিলেন এনবিআর- এর সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মো. মাসুদ সাদিক ও সামস উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ সহ অন্যরা।

news24bd.tv/আলী