কানসাটে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম

সংগৃহীত ছবি

কানসাটে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম

রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থকরী ফসল আমকে বিশ্বে ব্যাপক পরিসরে পরিচিত করতে এবং আম প্রিয় দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম। এই মিউজিয়াম হবে দেশের সর্ববৃহৎ আমের জার্মপ্লাজম (মাতৃগাছ সংরক্ষণ) সেন্টার। ফলে বারোমাসি আমসহ দেশের সকল প্রকার আমের জাত এখানে রোপন ও সংরক্ষণ করা হবে।  

অন্যদিকে বিলুপ্ত প্রায় সকল জাতের আম ছড়িয়ে দেয়া হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

থাকবে সংগ্রহকৃত বিদেশী আমের জাতও। এছাড়া এই মিউজিয়ামে এসে সবাই প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশের সকল প্রজাতির আম গাছ দেখার সুযোগ পাবে।  

জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ২০ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ২৫ হাজার ২৫০টি গাছে প্রায় ৩লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। শিবগঞ্জে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮০ শতাংশ লোকের জীবন জীবিকা নির্ভর করে আমের ওপর।

 

শতাধিক বছর আগে থেকেই শিবগঞ্জে আম অর্থকারী ফসল বলে আখ্যায়িত আছে। মধ্যখানে আমের ঐতিহ্য কিছুটা স্লান হয়ে গেলেও বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরী করা হয়েছে শিবগঞ্জের কানসাট রাজার বাগানে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম। যার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে করে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিবগঞ্জের আমের হারানো গৌরব ফিরে আসবে, অন্যদিকে তেমনি অনেক লোকের কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩২ একর খাস জমির উপর স্থাপিত বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামে প্রায় ১’শ বছরের পুরাতন ১৬ জাতের ২১’শ টি আম গাছ আছে।  

এই বাগান ঘিরে প্রায় ১’শ বছর আগে ময়মনসিংহের জামিদার রাজা শশিকান্ত আচার্য কানসাটে কাচারী বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে খাজন আদায় করতো। তার হাতে এ আম বাগান তৈরী হয়। যা কুজ্জা রাজার বাগান নামে পরিচিত। বাগানটির ঐতিহাসিক ঐতিহ্য থাকায় দেশ বিদেশ থেকে অনেকে এ বাগানটি পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন সমস্যার কারনে পরিদর্শনে আসা পর্যটকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।  

শুধু তাই নয়, এ বিশাল বাগানটি ঘিরে এখানে বসতো মাদকের হাট ও আড্ডা, চলতো নানা ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ।  

যা শিবগঞ্জ উপজলো নির্বাহী কর্তকর্তার নজরে আসলে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগা মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করার সিন্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে সেখানে অবৈধভাবে ২৭টি স্থাপনা ও বাড়ি উচ্ছেদ করে তাদের অন্যস্থানে পূর্নবাসন করা হয়েছে।  

এই প্রসঙ্গে আম গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুখলেশুর রহমান জানান, সারা দেশে প্রায় ৮’শ ধরনের আম রয়েছে, তার মধ্যে শুধু চাঁপাইনাবগঞ্জ জেলাতেই সাড়ে ৩’শ জাতের আম রয়েছে। আর এজন্যই চাঁপাইনবাবগঞ্জকে উত্তরবঙ্গের আমের রাজধানী বলা হয়।  

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এসে একসংগে প্রায় সাড়ে ৩’শ আমের জাত দেখে সবগুলো আমকে চিনতে পারবে এবং আম সর্ম্পকে তাদের আগ্রহ বাড়বে।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাঙ্গো মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  

অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের মাধ্যমে শিবগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে  আলোচনা করে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন তা অক্ষুন্ন থাকে সে ব্যাপারে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

news24bd.tv/আলী