যৌতুকের জন্য দুই স্ত্রীকে হত্যা, শ্বশুর-শাশুড়ি আটক

নিহত গৃহবধূ আমেনা [ছবি: নিউজ টোয়েন্টিফোর]

যৌতুকের জন্য দুই স্ত্রীকে হত্যা, শ্বশুর-শাশুড়ি আটক

সুমন সিকদার • বরগুনা প্রতিনিধি

যৌতুকের জন্য প্রথম স্ত্রী মনিরাকে  হত্যার এক বছরের ব্যবধানে এবার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও হত্যা করেছে এক পাষণ্ড স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামে।

নিহত গৃহবধূর নাম আমেনা (২৩)। রোববার তাকে শ্বাসরোধ এবং পিটিয়ে হত্যা করেছে যৌতুক লোভী স্বামী মেহেদি হাসান আকন (২৫)।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্ত্রী মনিরাকে হত্যার ৩ মাসের মাথায় আমতলী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মো: হানিফ হাওলাদারের মেয়ে আমেনার সাথে গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর কলাগাছিয়া গ্রামের আলমগীর আকনের ছেলে মেহেদি হাসান আকনের (২৫) সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আমেনার বাবা সংসারের সকল মালামাল জামাইয়ের বাড়িতে পাঠায়।  

news24bd.tv

বিয়ের ৩ মাসের মাথায় যৌতুক লোভী  মেহেদি হাসান আমানাকে তার বাবার বাড়ী থেকে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল এবং নগদ ১ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়।

এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমেনাকে গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাপক মারধর করে।  

নতুন বছরের প্রথম দিন আমেনা তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। এর মধ্যে মেহেদি তার স্ত্রী আমেনার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। ৩ মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকার পর গতকাল বিকেলে মেহেদি হাসান তার বউকে ‍নিতে যায়। আমেনাও তার স্বামীর সঙ্গে চলে আসে।

২২ ঘন্টার ব্যাবধানে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশের একটি মুগডাল ক্ষেতে আমেনার লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।  

পুলিশ এবং এলাকাবাসীর ধারণা, আমেনাকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

উদ্ধারকারী পুলিশের উপ পরিদর্শক(এসাআই) মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, নিহত আমেনার ঠোঁটে, উরুতে, হাঁটুতে অাঘাতের চিহ্ন এবং গলায় ওড়না পেচানো ছিল।  

আমেনার স্বামী মেহেদি হাসান এবং তার বাবা আলমগীর আকন পেশায় রাজ মিস্ত্রি। তারা বরিশাল শহরে দৈনিক চুক্তিতে কাজ করে।  

এর আগে মেহেদি হাসান কলাগাছিয়া গ্রামের মফেজ হাওলাদারের মেয়ে মনিরাকে বিয়ে করে বরিশালের রুপাতলীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে যৌতুকের জন্য ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে তার বাবা-মার সহযোগিতায় হত্যা করে ‘আত্মহত্যা’ বলে অপপ্রচার চালায়।

সে সময় বরিশাল কোতয়ালি থানা পুলিশ মেহেদিকে আটক করলেও কয়েক দিনের মাথায় ছাড়া পায় সে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে সেই হত্যার ঘটনা ধামা-চাপা দেয় মেহেদি। তার হুমকির কারণে মনিরার বাবা মফেজ হাওলাদার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চেয়ে মামলাও করতে পারেননি।  

আমেনার মা খাদিজা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, ‘মোর ভাল মাইয়াডা আইয়া স্বামীর বাড়ি গেল হেই মাইয়াডা এহন লাশ অইয়া আমার কোলে ফেরত আইলো। মুই এইডা ক্যামমে মাইনা নিমু। ওআল্লা মুই এহন মইরা যামু। এহন মোরে লইয়া যাও। মুই এইয়ার বিচার চাই। মুই মেহেদির ফাঁসি চাই। মুই যেন হেইডা দেইখা যাইতে পারি। ’

আমেনার ভাই আবু মুছা বলেন, ‘বুইনডায় মোর কি অপরাধ করছিল যে হ্যারে মাইরা হালাইতে অইবে। আমরা এইআর কঠিন শাস্তি চাই। ’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সহিদ উল্যাহ জানান, আমেনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধ এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি সহিদ উল্যাহ আরো বলেন, আমেনার স্বামী মেহেদি ঘটনার পর পালিয়ে যায়। শ্বশুর আলমগীর আকন পালিয়ে যাওয়ার সময় পটুয়াখালীর খাসের হাট এবং শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে স্থানীয় পঞ্চায়েত বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মেহেদির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।  

সুমন/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর