‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ লোডশেডিং

সংগৃহীত ছবি

‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ লোডশেডিং

অনলাইন ডেস্ক

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। শুধু রাজধানীই নয় দেশের বেশিরভাগ জেলার তাপমাত্রা ৪০ এর আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে তীব্র দাবদাহ আর গরমে অতিষ্ট জনজীবন। এরই মধ্যে দেশে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড ভাঙছে।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এ দিন রাত ৯টায় দেশে ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। তবুও থামছে না লোডশেডিং। রাজধানীতে মোটামুটি বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামের অবস্থা ভালো নয়।
বিশেষ করে তীব্র গরমে এমনিতেই মানুষ অতিষ্ট, তার ওপর এই লোডশেডিং গ্রামীণ জীবনে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।  

গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ আসেই না। এ অবস্থায় ফুঁসে উঠেছে গ্রামের মানুষ। কোনো কোনো গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিসেও হামলাও হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পমালিকরা বলেছেন, একবার কারখানা বন্ধ হলে পুরো কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে ফ্যাক্টরি চালু করতে আরও ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এ অবস্থায় ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, কোনাবাড়ী, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ এলাকার পোশাকসহ অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছর যে পরিমাণ গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির কথা পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছিল, ঠিক ওই পরিমাণ সরবরাহ পাচ্ছে না পেট্রোবাংলা। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১৫-২০ মিনিট থেকে পুনরায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার গেলে আর আসার নাম নেই। রোববার ভোর ৪টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টায় আটবার বিদ্যুৎবিভ্রাট হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দৈনিক ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং করছে। ঝিনাইদহের অধিকাংশ এলাকায় ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা 

প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ‘অতিষ্ঠ’ হয়ে ‘বিক্ষুব্ধ’ লোকজন ফেনীর ছাগলনাইয়ার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ছাগলনাইয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জানে আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বিক্ষুব্ধ দুই সহস্রাধিক জনতা বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালিয়ে অফিসের গেট, আসবাবপত্র, দরজা ও জানালার কাচ ভাঙচুর করেছে। এ সময় ভয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ’ 

স্থানীয়রা বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে মানুষ। বাসাবাড়ি ও মসজিদে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। ইফতার, তারাবি, সেহেরি ও নামাজের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় রোজা রাখা এবং ইবাদত করতেও সমস্যা হচ্ছে মানুষের।

এদিকে সিলেটে মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎবিভ্রাটের যন্ত্রণায় নগরীতে মধ্যরাতে সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা। তবে সড়ক অবরোধের প্রায় ১৫ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে এলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় ইফতারের আগ থেকেই বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ইফতার ও তারাবির নামাজ পরে রাত ১১টার দিকে বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন। তিন দিন ধরে সিলেটের সব এলাকায়ই চলছে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট। একদিকে রমজান, অন্যদিকে গরমের উত্তাপ। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরেই সিলেটে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারের সময় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায়, তেমনই রাতে সেহেরির সময়ও বিদ্যুৎ চলে যায়। দিন-রাত মিলিয়ে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না সিলেটবাসী। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

এখন সারা দেশে সরকারিভাবে ১০০০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা আরও বেশি। বিতরণ কোম্পানিগুলোর হিসাবে এই লোডশেডিং ১৫শ থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এখন গড়ে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে ১৫ হাজারের ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এবার গরমের কারণে অন্য বছরের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ ১১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য কিছুটা বিপাকে পড়েছে পিডিবি। না-হলে চলতি বছর আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হতো।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্য

সোমবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধ যদি ক্রান্তিকালেও থাকে, তাহলে বুঝতে হবে উদ্দেশ্য ভালো না। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কিছুদিন আগেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না। জ্বালানি সংকটের মধ্যে এখন আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব না। ’

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক