সন্তানের দাফন শেষে খবর এলো বাবাও আর নেই

ছেলে ফারদিন আরাফার স্বাধীন এবং বাবা কুতুব উদ্দিন

সন্তানের দাফন শেষে খবর এলো বাবাও আর নেই

অনলাইন ডেস্ক

পরিবারের একমাত্র ছেলে ফারদিন আরাফার স্বাধীনের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরেন স্বজনেরা। কান্নার আওয়াজে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা কাজিপাড়া এলাকা তখন শোকে স্তব্ধ। কিন্তু রোববার রাত ৩টার দিকে পরিবেশ আরও ভারী হয়ে ওঠে যখন ঢাকা থেকে খবর আসে, ফারদিনের বাবা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ভাসানীও (৫৯) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জাহাজ এমটি এবাদি-১ ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন চিফ ইঞ্জিন ড্রাইভার কুতুব উদ্দিন।

চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রোরবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাবার সঙ্গে জাহাজে দেখা করতে গিয়ে একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ফারদিন (২৫)। জাহাজের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন (৫২)।

তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।

দুর্ঘটনার আগে ফোনে ফারদিন মা’কে বলেন, ‘আম্মু আমাকে যদি বিয়ে করিয়ে দিতে, তাহলে তোমাকে দেখার মতো মানুষ পেতে। ’ কে জানতো, এটিই মায়ের সঙ্গে সন্তানের শেষ কথা। ফারদিনের আর কোনও ভাই নেই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন মাকে দেখার মতো কেউ থাকলো না। এসব কথা স্মরণ করে মা ও পরিবারের সদস্যরা আর্তনাদ করছিলেন।

কুতুব উদ্দিন ৩৩ বছর জাহাজটিত কর্মরত ছিলেন। চলতি বছর অবসর নিয়ে জীবনের শেষ সময়টুকু স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকার চিন্তা ছিল তাঁর। এর আগেই যেতে হলো না ফেরার দেশে।

পরিবারের সঙ্গে কুতুব উদ্দিনের শেষ কথা হয়েছিল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। তাঁর আকুতি ছিল, ফারদিনকে মায়ের (দাদি) কবরের পাশে যেন দাফন করা হয়। চারদিন পর সন্তানের কবরের পাশে তাঁকেও দাফন করার সিদ্ধান্ত নিলো পরিবার। একমাত্র ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাহমিনা আক্তার। তাঁকে দেখার জন্য পরিবারে কোনও পুরুষ সদস্য রইল না। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন।

ফারদিন নাবিকের ওপর তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। আগামী জুনে তাঁর মামার সঙ্গে ব্রাজিলের একটি জাহাজে যাওয়ার কথা ছিল। সব প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। এর আগে বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য বরিশালে বাবার জাহাজে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা আগে কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করা জাহাজটিতে পৌঁছান। পরে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত ফারদিনের শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে যায়।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিতে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় দাদির কবরের পাশে ফারদিনকে দাফন করা হয়। মামা মোহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, তাঁরা পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও মামলা করবেন না। মালিকপক্ষের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। হাসপাতালের সব খরচ তারা বহন করেছে। তবে এমন দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

news24bd.tv/আলী