যুক্তরাজ্যে কেন কমছে না খাদ্যের দাম?

সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাজ্যে কেন কমছে না খাদ্যের দাম?

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। কিছুদিন আগেও ৫০ ইউরোতে যে বাজার করা যেত সেটা করতে এখন ৬০ ইউরোর বেশি প্রয়োজন হয়। সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটে খাদ্য সম্মেলন করেছেন। কৃষক, সুপারমার্কেট মালিকসহ খাদ্য শিল্পের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী হৃষি সুনাক।

কৃষি খাতে দেওয়া ৪৫ হাজার ভিসার সঙ্গে আরও ১০ হাজার ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এখনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। সম্প্রতি সেই দাম কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

তবে কমেনি খরচ। কিন্তু কেন?

অত্যধিক খরচ 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শস্য, সূর্যমুখী তেল এবং সারের দাম বেড়েছে। সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মাংস, দুগ্ধ, শস্য, তেল এবং চিনির বৈশ্বিক পাইকারি দাম গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও এসব পণ্যের দাম আবার অনেকটাই নিম্নমুখী।  

খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও বিপণন কাজে অনেক জ্বালানির ব্যবহার হয়। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খরচ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। এছাড়া ব্রেক্সিটের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া, শ্রমিক সংকট ও ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাদ্যপণ্যে লাভের পরিমাণ খুবই কম

খাদ্যপণ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বেড়েছে বহুগুণ। প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের মার্জিন অনেকটাই কম।  যুক্তরাজ্যের বাজারে বিক্রি হওয়া একটি চেডার চিজের দাম ২.৫ পাউন্ড। একটি গবেষণায় পোর্টসমাউথ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাবিদরা দাবি করেছেন, এই চিজ বানাতে কৃষকদের খরচ প্রায় ১.৫ পাউন্ড। বাকি ১ পাউন্ডের বেশিরভাগই প্রসেসর ও খুচরা বিক্রেতার খরচ। ২.৫ পাউন্ড মূল্যের একটুকরো চিজ তৈরি ও বিক্রি করে মোট লাভ হয় মাত্র ৩.৫ পেন্স (১০০ পেন্স = ১ পাউন্ড)। সুপারমার্কেট সাধারণত ২.৫ পেন্স পায় যা বিক্রয়মূল্যের মাত্র ১ শতাংশ। আর কৃষক পায় এক পেন্সেরও কম। ডেইরি ফার্মগুলোর সংগঠন বলছে, তাদের খরচ বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি।  

সব পর্যায়ে দাম কমতে সময় নেয়

সুপারমার্কেটগুলো পাস্তা, দুগ্ধজাত পণ্য এবং তেলের মতো কিছু পণ্যের দাম কমিয়েছে। এর প্রচারও বেশি করে করতে চায় তারা। তবে কিছু পণ্যের দাম কমা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে খরচ কেন কমছে না?

এ কথা প্রায়ই দাবি করা হয় যে, যখন দাম বাড়ে তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা দ্রুত দাম বাড়িয়ে দেয়; কিন্তু যখন দাম কমে তখন তারা ধীরগতিতে কমায়। তবে অনেক সময় এই পণ্যের কেনাবেচা দাম নির্ধারণ অগ্রিম হয়ে থাকে। ফলে গত বছর দাম বেশি ছিল এবং সে বছরে যেসব পণ্য অগ্রিম কেনাবেচা হয়েছে তার দাম এখনো বেশি রয়েছে।  

তবে আশার কথা হলো, পাইকারি মূল্যের মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি থাকলেও ক্রমশই তা কমে আসছে। ফলে দাম বাড়ার হার কমে যাবে। যদিও তার জন্য ছয় মাসের মতো সময় লাগবে।

ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় দাম কম 

ব্রেক্সিটের ফলে খাদ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হলেও ইউরোপের অন্য দেশ থেকে যুক্তরাজ্যের খাবারের দাম অনেকটাই কম। এমনটিই বলছে, গবেষণা সংস্থা অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদ মাইকেল সন্ডার্সের গবেষণা।

খাদ্য ও পানীয়র দাম ইউরোপের অন্য দেশগুলোর গড় দামের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। একইসঙ্গে রুটি, মাংস ও মাসের দাম অপেক্ষাকৃত কম।  

খুব শিগগিরই কমছে না দাম

রেজোলিউশন ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, আসছে গ্রীষ্মে ২০২০ সালের তুলনায় প্রতি বাড়িতে খাবারের খরচ বাড়বে ১ হাজার পাউন্ড। কিছু জিনিসের দাম কমলেও সামগ্রিক মহামারীর আগের অবস্থায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০২০ সালের তুলনায় সব জিনিসের কাঁচামাল, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।  

উপরন্তু, উচ্চ খরচের কারণে কৃষকরা ইতিমধ্যে তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন, অন্যদিকে খাদ্য প্রস্তুতকারীরাও তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

news24bd/ARH