অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণ

অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই প্রশিক্ষণ

অনলাইন ডেস্ক

পটুয়াখালীর গলাচিপার পৌর এলাকায় ও চর আগস্তি গ্রামে এবং কুষ্টিয়া সদর ও দৌলতপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় চালু হয়েছে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসচ্ছল নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।  

সংগ্রামী এই নারীরা সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে যেন নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারেন এ লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাঁদের সেলাই মেশিন প্রদান করা হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের আর্থিক সহায়তায় প্রশিক্ষিত এসব নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হবে।

গলাচিপা উপজেলা মৎস্য অফিসের হলরুমে এবং চর আগস্তি গ্রামের বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের শ্রেণিকক্ষে তিন মাসব্যাপী এই সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। কুষ্টিয়ায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে মাসখানেক হলো। আগস্টেই এখানকার প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে  দেবেন কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আসা নারীদের চোখেমুখে খেলা করে আনন্দের ঢেউ।

সেলাইয়ের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনতে প্রস্তুত হচ্ছেন গ্রামীণ এই অসচ্ছল নারীরা।

গলাচিপায় উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নের বড় শিবা গ্রামের বাসিন্দা লুবনা। তিনি চর আগস্তি গ্রামের ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। তাঁর বাড়ি থেকে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার।

বেশির ভাগ পথ হেঁটে, কিছুদূর ভ্যানে করে গিয়ে তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২৫ বছর বয়সী লুবনার স্বামী নুরুল ইসলাম সরদার গত বছর মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর লুবনার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। চার ও এক বছরের দুই সন্তান নিয়ে নানা সংকটের মাঝে দিন কাটছিল তাঁর। অভাব তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।

খেয়ে না খেয়ে দুর্গম চরে কোনোমতে দুই সন্তানকে নিয়ে লুবনা অসহায়ভাবে জীবনধারণ করছিলেন। শুভসংঘের সদস্যরা যখন তাঁকে সেলাই প্রশিক্ষণের কথা বলছিলেন, কথাগুলো শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ আবার প্রশিক্ষণের পর নতুন সেলাই মেশিন পাবেন, এটা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। আবেগাপ্লুত লুবনা বলেন, ‘আমার এলাকায় আমার সংসারের আয়ের জন্য এমন করে কেউ এগিয়ে আসেনি। বসুন্ধরা গ্রুপ আমার কাছে দেবদূতের মতো সাহায্য করার জন্য হাজির হয়েছে। আমি এই প্রশিক্ষণ শেষে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে চাই। এটা আমার সন্তানদের জন্য আমার লড়াই। ’ গলাচিপায় ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী প্রমুখ। দুজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় এবং দৌলতপুর উপজেলার আল্লাহরদরগাহ এলাকায় বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাইয়ের কাজ শিখছেন অসহায় এই নারীরা। কুষ্টিয়ায় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রগ্রাম অফিসার মর্জিনা খাতুন এবং দৌলতপুরে কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। অসহায় দরিদ্রদের সেলাই প্রশিক্ষণ এবং তাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং বসুন্ধরা এই উদ্যোগ কুষ্টিয়ার সব কটি উপজেলায় ছড়িয়ে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। ’ মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের সহায়-সম্বলহীন অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য যে সেলাই মেশিন প্রদান করছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। মেশিনপ্রাপ্ত মেয়েরা এই মেশিন দিয়ে উপার্জন করে নিজেদের এগিয়ে নেবেন বলে আমার বিশ্বাস। ’

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা হাওয়া খাতুন সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছি। তাই সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার যে সুযোগ করে দিল, এ জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রশিক্ষণ শেষে আমি এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চাই, যেন আমার সংসারের অভাব দূর হয়। ’ একই গ্রামের দিনমজুর মনজু ইসলামের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মায়া কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মায়ার বাবা অসুস্থ থাকায় বর্তমানে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। অভাবের কারণে মায়া স্কুলের বেতন দিতে না পারায় তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মায়াদের নিজের একটি ঘর থাকলেও সেটি বসবাসের অনুপযোগী। বৃষ্টি এলে ঘরের ভেতর পানি পড়ে। তাদের বাড়িতে কোনো নলকূপ ও বাথরুম নেই। অন্যের বাড়ি গিয়ে তারা এগুলোর চাহিদা মেটায়। শুভসংঘের সদস্যদের কাছে খবর পেয়ে মায়া নিজে স্বাবলম্বী হয়ে সংসারের হাল ধরার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে এসেছে। মায়ার লক্ষ্য, বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং সেলাই মেশিন পেয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে।

দৌলতপুর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের দরিদ্র জিয়ারুল ইসলাম শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী আলিয়া বাড়িতে সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কিছুদিন আগে এক অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের ঘরসহ জীবিকার উৎস সেলাই মেশিনটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অন্ধকার নেমে আসে আলিয়ার পরিবারে। গৃহহীন হয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে তাঁদের দিন কাটতে থাকে। এর মাঝে দৌলতপুর উপজেলা শুভসংঘের সদস্যরা আলিয়ার খোঁজ পান। তাঁকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে আলিয়া বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি এখন বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে নতুন আঙ্গিকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।