না ফেরার দেশে চলে গেল মুক্তামণি

বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়া মুক্তামনি। ফাইল ছবি

না ফেরার দেশে চলে গেল মুক্তামণি

শাকিলা ইসলাম জুঁই,সাতক্ষীরা

সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাতক্ষীরায় বিরল রোগে আক্রান্ত কিশোরী মুক্তামণি। আজ বুধবার সকাল ৮ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ১২ বছরের ফুটফুটে শিশু মুক্তামণির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত মুক্তামণির বাবা-মাসহ স্বজনদের আর্তনাদে কামারবায়সা গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।


 
সকালে খবর পেয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন মুক্তামণির গ্রামের বাড়িতে তাকে দেখতে যান এবং পরিবারের প্রতি সমাবেদনা জানান। পিতা ইব্রাহিম হোসেন জানান, আজ বাদ আছর জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মুক্তামণির দাফন সম্পন্ন হবে।

গত এক সপ্তাহ ধরে মুক্তামণির অবস্থার অবনতি হয়। ব্যথা আর যন্ত্রণায় কান্না-কাটি করে দিন কাটছিল তার।

টিউমারে আক্রান্ত ডান হাতটি আরও ফুলে ফেপে পঁচে ওঠে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। রোগের বিস্তার হাতের মধ্যে থেকে বুক, পেট আর পায়েও ছড়িয়ে গিয়েছিল। রোগাক্রান্ত ওই হাত থেকে গত ২/৩ দিন ধরে ড্রেসিংয়ের সময় সাদা পোকা বের হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ফুটফুটে শিশু মুক্তামণির মা ও বাবা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দেন।

ইব্রাহিম হোসেন জানান, চিকিৎসকরা তো চেষ্টার কম করেননি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখভাল করেছেন। আমরা সত্যি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। অসুস্থ থাকাবস্থায় মুক্তামণিকে কয়েকদিন আগেও ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ডাক্তাররা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।

উল্লেখ্য, দেড় বছর বয়সে শিশু মুক্তামণির ডান হাতে মারবেল পাথরের মত একটি গোটা দেখা দেয়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, খুলনাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কী রোগ তা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। পরে হাতটি ফুলে ফেপে মোটা হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের। প্রথমে স্বাস্থ্য সচিব তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে মুক্তামনির চিকিৎসায় গঠিত হয় বোর্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ধরা পড়ে মুক্তামনির হাত রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত। তারপর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েক দফা অস্ত্রপচার করে অপসারণ করা হয় তার হাতের অতিরিক্ত মাংস পিন্ড। কয়েক দফা অস্ত্রপাচার শেষে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আনা হয় মুক্তামণিকে। এরপর আর ঢাকা মেডিকেলে যেতে রাজি হয়নি মুক্তামনি। বাড়িতেই কোন মতে চলছিল তার চিকিৎসা। হঠাৎ গত এক সপ্তাহ আগে মুক্তামণির অবস্থার চরম অবনতি হয়। অবশেষে আজ বুধবার সকাল ৮ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

সম্পর্কিত খবর