মানসিক স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের অর্জন

মানসিক স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের অর্জন

Other

মানসিক স্বাস্থ্য হল এমন এক অবস্থা যেখানে শরীর এবং মন উভয়েই সমান্তরালে কাজ করে। চলার পথের সকল বাঁধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে মানুষের মন সহজেই সুখ, শান্তি ও আনন্দ খুঁজে পায়। তবে অনেক মানুষের জন্যেই এই পথটা সহজ হয় না। ভালোবাসার কোন মানুষকে হারানো, হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো অসুখ, প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার সংঘর্ষ ইত্যাদিতে প্রতিকূলতার সময় যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা মনের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

অনেকেই সেখান থেকে পুরোপুরি ফিরে আসতে পারে না। ফলে এখান থেকে বিভিন্ন মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শরীরে কোন রোগ না থাকা মানেই সুস্বাস্থ্য নয়, বরং শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে পুরোপুরি ভালো থাকাই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। বেশিরভাগ মানুষই প্রতিকূলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে পারে, কিন্তু অনেকেই আছে যারা এসব অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না।

ফলে বাস্তবতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ফলে তাদের ডিলুশ্যন, হ্যালুসিনেশন, রাগ, শোক, দুঃখ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এসব চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক দেশেই কিছু ব্যবস্থা থাকে, কখনো সরাসরি চিকিৎসক, কখনোবা আবারও এসব সমস্যা থেকে কাটিয়ে ওঠা কেউ তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ লোক মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা, আত্মহত্যা, ডিমেনশিয়া ইত্যাদি কারণে মৃত্যুবরণ করে, যা বিশ্বে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৪ শতাংশ। ফলে বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য এবং এর গুরুত্ব নিয়ে তাই আরও বেশি সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। অবহেলা ও অজ্ঞতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দেওয়ায় এ সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (FYP) এবং ভিশন-২০২১ মানসিক স্বাস্থ্য মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই বিষয়কে সামনে রেখে একটি স্বাস্থ্যগত অবকাঠামোও তৈরি করা হয়েছে যেখানে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা নয়, অর্থনৈতিক ও জীবিকার জন্যও তা কার্যকরী হবে।

৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তার চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম (4th HPNSP)  বাস্তবায়ন করছে। এর উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সুশাসন শক্তিশালীকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সম্প্রসারণ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যের গুণমান উন্নত করা।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চতুর্থ এইচপিএনএসপি-তে মানসিক স্বাস্থ্যকে একটি অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মানসিক স্বাস্থ্যকে 'টপ টেন' গুরুত্ব দেয়া দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশকিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ ২০১৮ সালে একটি নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন পাস করেছে, যা একটি মানসিক স্বাস্থ্য নীতি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে। পেশাদার ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ পরিচালনা করার পরে একটি জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

মানসিক স্বাস্থ্য আইনের মূল লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থার সাথে নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করা, তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, তাদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের পুনর্বাসন করা। আইনটিতে ৩১টি ধারা রয়েছে যা দিকনির্দেশনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমন্বয় করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ২০২১ চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু এই নীতিগুলোতে স্থানীয় জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় অর্থ ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশেও ক্ষেত্রেও বিষয়টি আলাদা নয়। এখানেও অনেক বছর ধরে স্বাস্থ্য পরিসেবা এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে কম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করাই ছিল সারা দেশে মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়।


news24bd.tv/ নকিব