মাদারীপুর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূর হোসেন হাওলাদারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী আক্তার (১৫) নামের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার এক ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছেন। শিক্ষকের নির্যাতনে সহপাঠি আত্মহত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দেন।
এদিকে এই ঘটনা একটি প্রভাবশালী মহল ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর গ্রামের ইকবাল বেপারীর প্রথম পক্ষের মেয়ে সাথী আক্তার তার মামার বাড়ি একই উপজেলার মধ্য পেয়ারপুর গ্রামে থেকে চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। গত শনিবার সাথীর সঙ্গে তার দুই সহপাঠির কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নূর হোসেন হাওলাদার জানতে পেরে সাথী ও তার বান্ধবীদের ডেকে নিয়ে মারপিট ও গালিগালাজ করে।
নিহত সাথীর সহপাঠি রিতু আক্তার ও অন্তরা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন সাথীর সঙ্গে দুই বান্ধবীর ঝগড়া হয়। স্যার (প্রধান শিক্ষক) সাথীকে মারধর ও গালাগাল করে রোদের মধ্যে দাঁড় করে রাখায় সে মারাত্মকভাবে অপমানিত হয়। এই লজ্জা সইতে না পেরে সাথী আত্মহত্যা করেছে। ’
স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদীকা সানজিদা ইসলাম তানিয়া বলেন, এই ঘটনা একটি প্রভাবশালী মহল ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
সাথীর মামী মুক্তা বেগম বলেন, ‘আমার ভাগ্নীকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মারপিট ও গালিগালাজ করে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। আমি এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। ’
চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায় প্রধান শিক্ষক মো. নুর হোসেন হাওলাদার সাথী মারা যাওয়ার পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, সাথী ও আর এক ছাত্রী গালাগালি করায় আমি তাদের দুইজনকেই ডেকে এনে সবার সামনেই শাসন করে ক্লাসে পাঠিয়ে দিই। আর এই ঘটনা দুপুরে হয়েছে। সামান্য এ ঘটনায় সাথী যে ওষুধ (বিষ) খাবে তা ভাবতে পারিনি। আমি তার চিকিৎসার দায়ভার নিয়েছি। ’
তবে সাথী মারা যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ও স্কুলের সহপাঠিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে আটক করার আশ্বাস দিয়েছে। তাছাড়া নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করে নাই।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম এলাকা পরিদর্শন করেছে। এখনো মামলা হয় নাই। মামলা হলে আমরা সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বেলাল/তৌহিদ)