দেশে ফেরার মতো 'ডকুমেন্ট' তারেকের নেই: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

দেশে ফেরার মতো 'ডকুমেন্ট' তারেকের নেই: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারেক রহমান আর বাংলাদেশি নন। তিনি অন্যদেশে থাকছেন। পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে আমার মতে তারেক রহমান আর বাংলাদেশি নন।

দেশে ফেরার মতো তার কাছে কোন ভ্যালিড ডকুমেন্ট নেই।

সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রীর গুলশানের বাসায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ২ জুন তারেক রহমান তার স্ত্রী ও কন্যাসহ নিজের পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে সমর্পণ করেছেন।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার মতো তারেক রহমানের কাছে এই মুহূর্তে কোন ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই।

সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- তারেক রহমান তো নবায়নের জন্যও পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন।  

এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, না তিনি এমন কোনও আবেদন করেন নি। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের কাছে যদি এরকম কোনও ডকুমেন্ট থাকে তা তারা দেখাক। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করছি।

তারেক রহমান আইনের আশ্রয় নিচ্ছে এক্ষেত্রে বিষয়টি কী হতে পারে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা ভালো লাগছে যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আইনের আশ্রয় নিচ্ছে। যে আদালত তারেক রহমানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই আদালতের আশ্রয় নিচ্ছে। এটা ভালো।

তাহলে তারেক রহমান কী আর বাংলাদেশি নাগরিক নন, এটা কীভাবে সম্ভব? সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আপনার কাছে একটি জাতীয় পরিচয় বহনকারী ডকুমেন্ট ছিল, সেটা চার বছর আগে তিনি হস্তান্তর করেছেন। তাহলে তিনি দেশে ফিরবেন কীভাবে? দেশে থেকে পাসপোর্ট না থাকা এবং বিদেশে থেকে পাসপোর্ট না থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে বিষয়টি আরো ভালো বলতে পারবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংবাদ সম্মেলনে, তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেওয়া সংক্রান্ত একটি কাগজ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো একটি কাগজ তিনি প্রকাশ করেন। চার বছর আগেই তিনি পাসপোর্ট হস্তান্তর করেন বলে জানান শাহরিয়ার আলম।

সোমবার দুপুরে তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পর সন্ধ্যায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন’— এমন বক্তব্য দেওয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। একইসঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রকাশ করায় দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদককেও লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন’—এ খবর ‘ভিত্তিহীন’দাবি করে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২১ এপ্রিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সবুজ পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন তারেক রহমান। ’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সেই তারেক রহমান কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন?

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন তারেক রহমান। ১/১১-এর সময়ে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। এরপর থেকে লন্ডনে বসেই বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সর্বশেষ দলটির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান।

সম্পর্কিত খবর