অভিযানের পূর্বেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা ফাঁস!

অভিযানের পূর্বেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা ফাঁস!

গা ঢাকা দিয়েছে চিহ্নিত মাদক সিন্ডিকেট
এস এম রেজাউল করিম • ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠি জেলা পুলিশ শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করলেও অভিযান চালানোর আগেই তা ফাঁস হয়েছে। নামের তালিকা আগেভাগেই জানতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছে জেলার বড়-মাঝারি মাদক ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট সদস্যরা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে স্থানীয় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে ঠিক কত জনের নাম এ তালিকায় রয়েছে তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

তবে বিশেষ অভিযান চালানোর পর থেকে ঝালকাঠিতে অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেনা।  

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাপক তৎপরতার মুখে মাদক প্রতিরোধে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা বিষয়টি জানতে পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভাসমান মাদক ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করেছে।

 

অন্যন্য জেলায় এরইমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদক ব্যাবসায়ীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু ঝালকাঠিতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে থাকলেও অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা একাবারেই নগণ্য।

ঝালকাঠিতে ডিবি ও  পুলিশের পৃথক অভিযানে গেল ২৪ ঘন্টায় ৩৬৪ পিস ইয়াবা ও ৫৭০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন নারী, এক ছাত্রদল ও যুবলীগ নেতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সকালে ঝালকাঠি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।

এসময় ঝালকাঠি জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ওরা আস্তানাও পরিবর্তন করছে। তাই তাদের নাম-ঠিকানা প্রতিদিনই হালনাগাদ করতে হচ্ছে।  

ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তালিকা আগে থেকেই প্রস্তুত করা ছিল। তবে কত জনের নাম আছে বা ওই তালিকায় কারা আছে তাদের পরিচয় জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন তিনি।  

অতিরিক্তি পুলিশ সুপার বলেন, কৌশলগত কারণেই কোনো মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করা যাবেনা। চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ১শ জনকে আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মত আটক হয়েছে।  

এ ব্যপারে ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মো. জোবায়েরের কাছে জানতে চাইলে তিনি একটি সভায় আছেন বলে মুঠোফোনে জানান।  

তবে একটি সূত্র জানায়, জেলার প্রতিটি থানাধীন মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা চূড়ান্ত করার পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু অভিযানের সংবাদ আগেই ছড়িয়ে পড়ায় সকলেই আত্মগোপন করেছে। তাছাড়া গেল কয়েক দিনে দেশজুড়ে ২৫ মাদক ব্যবসায়ী নিহতের খবরে ঝালকাঠির মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ক্রসফায়ারের ঘটনায় ঝালকাঠি মাদক আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত এলাকার অনেক মাদক ব্যবসায়ী লাপাত্তা হয়ে গেছে।  

চিহ্নিত মাদক সম্রাটদের অনেককেই এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে চিহ্নিত আস্তানাগুলোতে। একই পরিবেশ বিরাজমান শহরের প্রতিটি এলাকায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি আরোপে গোটা ঝালকাঠি এখন মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনামুক্ত।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ মাদক বিক্রেতার একটি তালিকা প্রণয়ন করে ঢাকা হেডকোয়াটার্সে পাঠায়। ওই তালিকা থেকে সেবীদের বাদ দিয়ে অর্ধ-শত মাদক ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হেডকোয়াটার্স।

তবে অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রয়েছে ১০৬ মাদক ব্যবসায়ীর নাম। ওই তালিকাটি প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।  

এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছেন, পুলিশের এই ঘোষণা দিয়ে ধরপাকড়ে বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছে চিহ্নিতরা। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই কেটে পড়েছে। এখন যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা খুচরো ব্যবসায়ী ও মাদক সেবী। যাদের নামে মামলা বা মাদকসহ আটক হয়েছে, এমন লোকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছাড়াই অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আসামি বানিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। কাউকে আবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্যাঞ্চ (ডিবি)।


রেজাউল/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর