কেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে সুইস ব্যাংক?

সংগৃহীত ছবি

কেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে সুইস ব্যাংক?

অনলাইন ডেস্ক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণকারীদের পছন্দের তালিকার প্রথম দিকেই থাকে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। অন্য একটি কারণে আল্পস পর্বতের কোল জুড়ে অবস্থিত ছোট্ট দেশটি জনপ্রিয়তা রয়েছে। বহু মানুষ সুইস ব্যাঙ্কে পরিশ্রমের অর্থ রেখে নিশ্চিন্ত বোধ করেন। আবার অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ গোপনে জমা রাখতে ভরসা থাকে সুইস ব্যাংকের ওপর।

সুইস ব্যাংকে টাকা-পয়সা রাখতে সারা দুনিয়ার মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করে থাকে তাদের গোপনীয়তার নীতির কারণে। গ্রাহকের পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাঙ্ক। ফলে কে এই ব্যাঙ্কে কত টাকা রাখছেন, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। জনপ্রিয়তার এই চাবিকাঠিই সুইস ব্যাঙ্ককে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।

গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশের নিয়ম না থাকায় কালো টাকা রাখার জন্য এই ব্যাঙ্ককেই বেছে নেয় দুষ্কৃতী, অপরাধী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। সারা বিশ্ব থেকেই অসংখ্য মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ রেখে থাকেন।

সুইজারল্যান্ডের একটি আইন দ্বারা এই গোপনীয়তা স্বীকৃত, যার ফলে ব্যাংকগুলো কোন অবস্থাতেই তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে কারো কাছে বাধ্য থাকে না। ফলে কে কেন বা কীভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যাংকে রাখছে, সেই গ্রাহকদের সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোন তথ্য দেয় না। এই আইন বদল করতে হলে সেটা গণভোট অথবা পার্লামেন্টে পাল্টাতে হবে।

তবে এই আইনের মধ্যে একটি বিশেষ ধারাও রয়েছে। যার ফলে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে, যেমন জনস্বার্থে যদি কোন গ্রাহকের হিসাবের তথ্য প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় অথবা প্রতারণা বা জালিয়াতি উদঘাটনে আইনানুগ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ব্যাংক গ্রাহকদের তথ্য দিতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশন অব সুইস প্রাইভেট ব্যাংকার্স এর প্রধান মিশেল ডি রবার্ট কয়েক বছর আগে বিবিসির কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন, কিভাবে এই গোপনীয়তার নীতি কাজ করে। একজন ডাক্তার বা আইনজীবী যেভাবে তার রোগী বা মক্কেলের গোপনীয়তা বজায় রাখেন, এখানেও ব্যাপারটা তাই, বলছিলেন তিনি। 'একজন সুইস ব্যাংকার তার গ্রাহকের কোন তথ্য কাউকে দিতে বাধ্য নন, এটা রীতিমত নীতি এবং আইন বিরুদ্ধ। ' ঠিক এ কারণেই সুইজারল্যান্ড হয়ে উঠেছে বিশ্বের ব্যাংকিং সেবার এক বড় কেন্দ্র। তিনশ'র উপরে ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি ব্যাংক হচ্ছে ক্রেডিট সুইস এবং ইউবিএস। তবে সুইস ব্যাংকগুলোতে বেনামী হিসাব খোলার সুযোগ নেই।

কোন ব্যাংক গ্রাহকের একাউন্টটি হয়তো সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত থাকবে, কিন্তু গ্রাহকের আসল পরিচয় ব্যাংকের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্যই জানবেন। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ফেডারেল সংবিধান দ্বারা তা সুরক্ষিত। তবে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে এই সুরক্ষা কাজ করবে না। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোন অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোন বাধা নেই।

সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‌‘অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য, সেই অপরাধ সুইজারল্যান্ডেই হোক, আর অন্য কোন দেশেই হোক। ’ তবে সেজন্য সেসব অপরাধে ওই গ্রাহকের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে।

news24bd/ARH