কোথায় গেল সেই ঝলমলে শৈশব?

সংগৃহীত ছবি

কোথায় গেল সেই ঝলমলে শৈশব?

মাহমুদুল হাসান জুয়েল

বদলে গেছে শৈশব। বদলে গেছে দিন। এখন আর পরিবারের সবাই মিলে প্রতি শুক্রবার সাড়ে তিনটায় বিটিভি'র সামনে বসে রাজ্জাক-শাবানা, আলমগীর-ববিতার বাংলা সিনেমা দেখে না। রিমোর্ট ঘুরালে ২৪ ঘণ্টাই বিভিন্ন চ্যানেলে চলে উচ্চ প্রযুক্তির হরেক ভাষার সিনেমা।

এখন আর সিনেমার মধ্যে নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরলে মা-চাচিরা ছিঃ ছিঃ বলে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন না, পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে দেখেন হিন্দি আর ইংরেজি সিনেমা যেখানে থাকে একাধিক যৌন ও সহবাসের দৃশ্য। প্রতীকি নয়, শতভাগ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানো হয় ধর্ষণ দৃশ্যে! এখন আর শিশুরা শনপাপড়ি বা কটকটি খাওয়ার জন্য বায়না ধরে না, তারা খায় চিকেন, বার্গার, হটডগসহ হরেক রকমের আমদানিকৃত খাবার। শিশুরা এখন আর পুরনো কাপড় কেটে নিজ হাতে পুতুল বানায় না, বাপি (বাবা) সুপার শপ থেকে হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনে দেয় থ্যাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত পতুল। এখন আর বাবা-মায়েরা দুপুরে খাবারের পর জোর করে সন্তানকে বিছানায় নিয়ে ঘুমায় না।
আবার বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে ওই সন্তানও আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে খেলার মাঠে দৌড়ায় না। শিশুরা এখন সারাক্ষণ ব্যস্ত কোচিং থেকে কোচিংয়ে দৌড়াতে। বাকি সময় মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে। শিশুরা এখন বল কিনে দেওয়ার বায়না ধরে না, তারা বলে জিবি (ইন্টারনেট ডাটা) কিনে দিতে। বদলে গেছে সবই। কতটুকু লাভ হয়েছে, কতটুকুই বা ক্ষতি? ২০-২৫ বছর আগের সেই শৈশবের দিনগুলো মনে পড়লে এখনো বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে।

ছোটবেলায় পাড়ার দোকানে দোকানে চার আনায় মিলতো লাল রঙের "রাজা" কনডম। বেলুন বানিয়ে খেলার জন্য আমরা সেগুলো কিনে দেয়ার বায়না করতাম মুরুব্বিদের কাছে। মুরুব্বিরা বুঝাতো, "এই বেলুনে রাতে পুলিশ হিসু করে ফেলে যায়। '' একেতো হিসু তার উপর পুলিশের হিসু..এই বেলুন নিয়ে আর খেলা যাবে না। তারপরও সাবান দিয়ে ধুয়ে খেলতাম। তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না যা এখনকার শিশুরা অাগেভাগেই বুঝে যায়। জেনে যায়। হয়ত এটা তাদের এগিয়ে যাওয়া! তারা অনেক কিছুই আগেভাগে শিখছে। তবে এটাও ঠিক একটা অপরিপক্ক ফলকে জোর করে পাকানো হলে সেটার স্বাদ যেমন ভালো হয় না, তেমনি আবার মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হলে তাকে ইচড়েপাকা বলে গালিও দেওয়া হয়। ভালো-মন্দের বিচার প্রতিটা মানুষের নিজস্ব নৈতিকতা ও বিচারবোধের ওপর নির্ভর করে। তবে এটা ঠিক দেড় বছরের একটা শিশুর মুখের তোতলানো শব্দ যতটা আকর্ষণ করে, মায়ার জন্ম দেয়, স্পষ্ট শব্দ ততটা করে না।  

আজ দুপুরে ঢাকার মালিবাগে রেলরাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে অনেকদিন পর 'বেদের মেয়ে জোছনা' ছবিটি চলতে দেখলাম। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ অভিনীত  ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। মনে পড়ে গেল অনেকবার ভিসিআর ভাড়া করে এই ছবি দেখেছি। একবার বন্ধু-বান্ধব মিলে চাঁদা তুলে টিভি-ভিসিআর ভাড়া করে এনে বাড়ির উঠোনে চালিয়ে দিয়েছিলাম ছবিটি। গ্রামের শতাধিক মানুষ এসে একসঙ্গে উঠোনে বসে ছবিটি দেখেছিল। কত আনন্দেরই না ছিল সেই শৈশব। news24bd.tv

তখন টেলিভিশন বলতে শুধু বিটিভি। প্রতি শুক্রবারে বাংলা সিনেমা দেখানো হতো। শুক্রবারে সিনেমা দেখতাম। পুরো বাড়িতে একটা সাদাকালো টিভি, ঘরভর্তি মানুষ। সাড়ে তিনটায় সিনেমা শুরু, তিনটা থেকেই জায়গা দখলের চেষ্টা। সেই সুবাদে সিনেমা শুরু হবার আগে আবহাওয়ার খবর দেখা, বৌদ্ধদের ত্রিপিটক পাঠ শোনা- সবকিছুই হতো। গীতা পাঠ ও ত্রিপিঠক পাঠও অনেকটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ "সিনেমা শুরু"। মনে মনে প্রার্থনা করতা এডভেটাইজ (বিজ্ঞাপন) যেন না আসে। তখন অ্যাড/বিজ্ঞাপনকে আমরা এডভেটাইজ বলতাম। কিন্তু বিজ্ঞাপন ঠিকই আসতো। একটা দুইটা নয়, গুনে শেষ করা ছিল কষ্ট। বড়রা বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক কাজ সেরে নিত। আমরা ছোটরা, আঙুল দিয়ে বিজ্ঞাপণ গুনতাম। জায়গা ছেড়ে উঠতাম না, পাছে দখল হয়ে যায়। অনেক সময় টয়লেটের চাপ এলেও জায়গা ছেড়ে উঠতাম না। ত্রিশটা বিজ্ঞাপণ দেখানোর পরই সিনেমা শুরু হবে ততোদিনে আমাদের মুখস্ত ছিল। রুবেল, দিতি, জসীম, অসীম, শাবানা, ববিতা, রানি, রাজ্জাক, প্রবীর মিত্র, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুচরিতা ছিল সেই সময়ের চলচ্চিত্রের কাঙিক্ষত মুখ। এদের কেউ নেই মানে সিনেমা পানসে। রাজীব, আহম্মেদ শরীফ, জাম্বু ভিলেন থাকার কারণে কতো গালিই যে খেত তার হিসেব নেই। দিলদার, টেলিসামাদ না থাকলে সিনেমা জমতোই না। নায়ক মার খেলে আমাদের আফসোস হত, ভিলেনকে মারার সময় বলতাম, "মার..মার.."।

কোকাকোলার সাথে পাওয়া "ইও ইও" খেলনা ছিল বেশ জনপ্রিয়। হাতের মধ্যে সুতা দিয়ে পেচিয়ে চ্যাপটা আকৃতির রাউন্ড গোলকটা কে কতবার হাতে আপ ডাউন করাতে পারে তা নিয়ে হত প্রতিযোগিতা। মেয়েরা কাপড়ের তৈরি পুতুল বানাত, সেই পুতুলের জামা বানাতো, বিয়েও দিত অনুষ্ঠান করে। কোথায় গেল সেইসব দিন?

টাকাওয়ালা বাবার মেয়েরা খেলত একটা ব্যাটারিচালিত পুতুল দিয়ে। সেই পুতুলের সুইচ অন করলেই বাজত ‘চল ছাইয়া ছাইয়া’ গান। ছেলেদের সব থেকে দামি খেলনা ছিল রবোকোপ আর পিস্তল। বিকেলটা ছিল ছুটোছুটির। তখন খেলতাম ইচিং বিচিং, কুতকুত, বৌ ছি, ফুলের টোকা, বরফ পানি, ছোঁয়াছুঁয়ি, সাতচাড়া, ডাংগুলি, মাংস চোর। খুব ছোটরা খেলার বায়না ধরলে তাদেরকে "দুধভাত" হিসেবে খেলায় নিতাম, তবুও ছোট বলে বঞ্চিত করতাম না। খেলার মাঝে যদি কারো সাথে ঝগড়া হত তাহলে কানি আঙুলে আড়ি নিতাম, দু'দিন কথা বলতাম না। তারপর আবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুই আঙুলে ‘ভাব’ নিতাম। এখন থেকে আবার কথা বলা যাবে। তখন আবার রক্তের বান্ধবীর প্রচলন ছিল। কারও হাত কাটলে ছুটে যেতাম রক্তের সই পাতাতে। কাটা আঙুলের সাথে ভাল আঙুল মিলিয়ে হতাম "রক্তের বান্ধবী, কোনদিন এই বন্ধুত্ব যাবে না"। কোথায় গেল আমার সেই বান্ধবীগুলো?

সন্ধ্যা হলেই শুরু হত যন্ত্রণা। মাগরিবের আজান শুরু হলেই মাঠ থেকে ছুটতে শুরু করতাম। নিয়ম ছিল আজান শেষ হবার আগেই বাড়িতে ঢুকতে হবে। এরপর হাতমুখ ধুয়ে বই খাতা খুলে পড়তে বসো। সবার আগে পড়তাম সমাজ। বেশি বিরক্ত লাগত অংক। কি যে নল চৌবাচ্চা, ১ম পাইপ, ২য় পাইপ, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ। মাথাটা এলোমেলো করে দিত। তখন নিয়ম করে কারেন্ট (বিদ্যুৎ) যেত, এতো চার্জার লাইট ছিল না। যেসব পরিবারের কেউ বিদেশ থাকতো তাদের বাড়িয়ে একটা-দুইটা চার্জার লাইট থাকতো। মোম, হারিকেন, কুপি ছিল ভরসা। অংক করা থেকে মুক্তি পেতে দোয়া করতাম, "আল্লাহ, কারেন্ট যা"। হিসেবি মায়েরা কেরোসিন, মোম খুব জ্বালাতেন না। বিদ্যুৎ গেলেই পড়া থেকে মুক্তি। যেই বিদ্যুৎ যেত অমনি সবাই একসাথে চিৎকার করে বেরিয়ে আসতাম ঘর থেকে। শুরু হয় নতুন খেলা, "চোখ পলান্তিস" (অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা একেক জনকে খুঁজে বের করা)। তবে আলিফ লায়লা দেখার সময় বিদ্যুৎ গেলে মন ভীষণ খারাপ হত। এছাড়া ম্যাকগাইভার ছিল বিটিভির তুমুল জনপ্রিয় বিদেশি সিরিজ। এটা দেখতে চলে যেতাম বাড়ি থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে এক বাড়িতে। সেই বাড়িতে ব্যাটারি ছিল। তাই বিদ্যুৎ গেলেও সমস্যা হতো না। শত শত মানুষ উঠোনে বসে ম্যাকগাইভার দেখতাম। আর পড়া রেখে ম্যাকগাইভার দেখতে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রয়োজন ছিল। সেটা পেতে অন্তত ৫০ মি.লি. চোখের পানি ফেলতে হতো। এরপর নানা শর্তে মিলতো অনুমতি। বলা হতো বাসায় ফিরে অন্তত দুই ঘণ্টা পড়তে হবে। পড়তে বসতাম ঠিকই, তবে কখন যে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম তা বুঝতে পারতাম না।

ঈদ আসলে আমরা ঈদ কার্ড কিনতাম। "মিষ্টি মিষ্টি হাসিতে, দাওয়াত দিলাম আসিতে"- এমন ছন্দ লিখে বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াত দিতাম। সেই সময় সব চাইতে দামি জরিওয়ালা ঈদ কার্ড যেটা ছিল সেটা খুললে ভেতর থেকে অবিশ্বাস্যভাবে মিউজিক বাজত। ঈদের জামা ঈদের দিন ছাড়া কাউকে দেখাতাম না, পুরানো হয়ে যাবে ভেবে। জামা লুকিয়ে রাখা ছিল সে সময় আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন জুতো পরে বিছানার ওপর হাঁটতাম ময়লা লাগবে ভেবে। অনেক সময় নতুন জুতো পরে ঘুমিয়ে পড়তাম। খুলতে চাইলে কান্নাকাটি করতাম। এখনকার মতো চাইলেই পোশাকের সঙ্গে মিলানো ১০ জোড়া জুতো জুটতো না। তাই বছরে ঈদে এক জোড়া জুতোই আনন্দে ভরিয়ে দিত মন। যখন স্কুলে পড়ি তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হলো বেলি কেডস আর জাম্প কেডস- এর। যারা একটু ধনী পরিবারের সন্তান তারা দু'দিন আগে-পরে বেলি কেডস কিনে স্কুলে আসলো। দাম আড়াইশ' থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা। চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখাতো। বাড়িতে গিয়ে বেলি কেডস- এর বায়না ধরলাম। কয়েক মাস কান্নাকাটি করে মিলেছিল বেলি কেডস।  সে যে কী আনন্দ তা বলার ভাষা নেই!

স্কুলের ক্লাসরুমে টেবিলে কলম দিয়ে টোকা-টুকি খেলতাম। এটা ছিল নিষিদ্ধ। ক্লাস মনিটর আমাদের নাম লিখে রাখত। স্যার ক্লাসে ঢোকামাত্র মনিটর সেই তালিকা স্যারের কাছে দিয়ে দিত। এরপর শপাং শপাং শব্দ, 'আর করবো না, আর করবো না' বলে কতক্ষণ লাফালাফি। চোখের পানি দিয়ে শুরু হতো ক্লাস। অবশ্য মনিটর নিজে যেদিন আমাদের সঙ্গে খেলতো সেদিন আর কারো কোন সমস্যা হতো না।  এজন্য মনিটর হওয়ার জন্যও চলতো তুমুল প্রতিযোগিতা। ভোটের মাধ্যমে মনিটর নির্বাচিত হতো। সাধারণত ফার্স্ট বয়ই মনিটর হতো। কারণ, তার কাছ থেকে পড়া বুঝে নেওয়ার জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাকেই ভোট দিত। মনিটর নির্বাচিত হলে পুরো ক্লাসকে খাওয়াতে হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আট আনা দামের ওভালটিন চকলেট খাওয়ানোর রেওয়াজ ছিল। মনিটর আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হলে চার আনা দামের লেবু লজেন্স বা নারকেল চকলেট খাওয়াতো। আমরা ক্লাস টেনে উঠতে উঠতে অবশ্য মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছিল।

কলমের নিপ মুখে নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে ক্লাশের সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, এখন যদি ফ্যানটা খুলে পড়ে তাহলে সেটা কার মাথায় পড়বে ? ভাবনা শেষে দেখতাম ফ্যান ফ্যানের জায়গাতে আছে, কলমের নিপটা আর কলমে লাগানো যাচ্ছে না, কামড়ে চ্যাপটা হয়ে গেছে। অধিকাংশ কলমের মুখ থাকতো না। কারণ কামড়ে কামতে তা বিধ্বস্থ হয়ে যেত। পেন্সিলের মাথার রাবার খেয়ে ফেলেছি কত হিসেব নেই। পেন্সিল কাটার হারিয়ে মরা কান্না কাঁদতাম।  

ক্রিকেট খেলার সময় নিয়ম ছিল, যার ব্যাট সে আগে ব্যাটিং করবে। তক্তা কেটে নিজেরই ব্যাট তৈরি করতাম। প্রতিদিন কটকটিওয়ালা আসত। শনপাপড়ি, দিলবাহার (গুড় দিয়ে তৈরি এক ধরণের মিষ্টান্ন), হাওয়াই-মিঠাই বিক্রি করতো হাক ছেড়ে ছেড়ে। এগুলো কিনতে টাকা লাগত না। পুরনো কাগজ, লোহা-লক্কড়, প্লাস্টিকের কিছু একটা দিলেই কটকটি, শনপাপড়ি, দিলবাহার পাওয়া যেত। বিক্রেতারা হাক ছাড়তো-  "এই...পুরনো শিশি-বোতল, লোহা লক্কড়, ছিঁড়াফাঁরা জুতা দিয়ে রাখতে পারেন কটকটি"। বিকৃত গলায় হাক ছাড়তো এই কটকটি, শনপাপড়ি বলে। আমরা এক টাকা দিয়ে বোম্বে আইসক্রিম খেতাম, স্যাকারিন মেশানো। সেই আইসক্রিমে আবার লটারি ছিল। সাদা কাগজ। পানিতে ভেজালে লেখা উঠতো। ২ উঠলে দুইটা আইসক্রিম দিতো। অধিকাংশ সময় ১ উঠতো। তবে আমরা কায়দা শিখে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে সাদা কাগজে লেবুর রস দিয়ে ৩/৪ লিখে শুকিয়ে নিয়ে আসতাম। চোখের পলকে সেই কাগজ ভিজিতে দিতাম। দোকানদার বাধ্য হয়ে ৩/৪টা আইসক্রিম দিত। তবে এ নিয়ে অনেকবার দোকানদারের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। কারণ, মুখে বললেও তার লটারিতে সে কখনো ২ এর বেশি লিখতো না। সেখানে ৩/৪ উঠলে ধরা তো খেতেই হবে। তবে আম-জনতা আমাদের পক্ষেই থাকতো। আর সবার সামনে দোকানদার বলতেও পারতো না যে সে ৩/৪ লেখেনি। কমলা রঙের আইসক্রিম খেয়ে ঠোট কমলা হয়ে যেত। সেই কমলা ঠোট নিয়ে আমাদের কি গর্ব, আজো চোখে ভাসে।

মেলা থেকে পটপটি লঞ্চ, টমটম গাড়ি, লাটিম, রকেট (কাঁচের পাইপের মধ্যে জরি মেশানো পানিতে একটি কাচের টুকরো), বানর (সঠিক নামটা মনে নেই। লোহার স্পোকের সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের বানর থাকতো, টিক টিক করে নিচের দিকে নামতো), বেলুন-বাঁশি আরও কতকিছু কিনে আনতাম। সাইকেল-রিক্সার টায়ার ও রিং দিয়ে গাড়ি বানিয়ে চালাতাম। যাদের টাকা ছিল তারা রিক্সার বেয়ারিং কিনে গাড়ি বানাতো। আবার তালের মৌসুমে একটা লাঠির দুই মাথায় দুইটা কাঁচা তাল লাগিয়ে ঠেলাগাড়ি তৈরি করতাম। সেগুলো দিয়ে আবার যুদ্ধও করতাম পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে। কী সব সোনালী দিন ছিল সেগুলো। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো ? প্রযুক্তি আমাদের কোথায় এনে দাঁড় করালো? এখন আর নেই সেইসব খেলনা। বদলে গেছে জীবনযাত্রা। বদলে গেছে শিশুকাল। কোথায় গেল সেই ঝলমলে শৈশব?

লেখক: বেসরকারি চাকুরিজীবী

পাঠক কলামে প্রকাশিত লেখা একান্তই পাঠকের নিজস্ব ভাবনা। এর কোন দায়-দায়িত্ব নিউজ-টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষের নয়।

সম্পর্কিত খবর