পাল্টাপাল্টি সমাবেশ: সড়কে কম গণপরিবহন, দুর্ভোগে নগরবাসী

সংগৃহীত ছবি

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ: সড়কে কম গণপরিবহন, দুর্ভোগে নগরবাসী

অনলাইন ডেস্ক

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সড়কে কম ছিলো গণপরিবহন। শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন চলাচল কমে যায়। সমাবেশের আগের দিন বাস চলাচল করার কথা জানানো হলেও পথের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। গণপরিবহনের অপেক্ষায় রাস্তায় অনেক সময় পার করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।

বাস না থাকায় অনেককে পায়ে হেঁটে কিংবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় চলাচল করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের সংখ্যাও অন্য যে কোনো শুক্রবারের তুলনায় কম। বাস-সিএনজি সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ জনগণ।  

শুক্রবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।

প্রেসক্লাবেও ছিল একই অবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশ পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির কারণে অতীতে যানজট তৈরি হতে দেখা গেছে। শুক্রবারের সমাবেশকে ঘিরেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর আগে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশের দিনেও গণপরিবহন তুলনামূলক কম চলেছে। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রামপুরা থেকে সদরঘাটগামী যাত্রী আহসান জানান, সকাল থেকেই সদরঘাটের কোনও গাড়ি পাইনি। সিএনজি অটোরিক্সাও কম চলাচল করছে। ভাড়া চাচ্ছে ৬০০ টাকা। না পারতে রিক্সা নিলাম, ভেঙে ভেঙে যাবো। যাওয়ার পথে দেখলাম রাস্তার পাশে বাস পার্ক করা।

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কের মোড়ে গণপরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। সকাল থেকেই রাজধানীর শনিরআখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, শিক্ষা ভবন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, বিশ্বরোড, গাবতলী, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, ফার্মগেট, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল খুবই কম ছিল। তবে রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি চলাচল করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়ায় চলছে সেসব যানবাহন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আজ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশনা আসেনি কোনও জায়গা থেকে। কাউকে এরকম নির্দেশনা দেওয়াও হয়নি। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চালাতে বলেছি আমরা। গাড়ি সড়কে চলছেও কিন্তু। মালিকরা কেউ কেউ হয়তো গাড়ি ভাঙচুরের আশঙ্কায় বাস নামায়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহম্মেদ সবুর বলেন, রাস্তায় গাড়ি কমবেশি চলছে। আজ গাড়ি বন্ধ নয়, বরং চালানোর জন্য মালিকদের বলেছি আমরা। কিন্তু ভাঙচুর বা পোড়ানোর আশঙ্কায় বাস বন্ধ রাখতে পারেন কোনও কোনও মালিক। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে মালিকরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না হয়তো। এটা মালিকের সিদ্ধান্তের বিষয়, আমাদের কিছু করার নেই।

মৎস্য ভবন মোড়ে টানা এক ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষা করেছিলেন আতিকুর রহমান। ছুটির দিনে যাত্রাবাড়ী বোনের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল তার। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কোনও গাড়ি না পেয়ে দুপুর ১টার দিকে সেগুনবাগিচার বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আতিকুর বলেন, এমনি যানজটে দূরে কোথাও যেতে চাই না। ছুটির দিনে বের হবো তাও রাজনৈতিক নানা কর্মসূচির কারণে যেতে পারছি না। গাড়ি নাই। যেগুলো আসছে গেট বন্ধ করে আসছে। এমন জানলে বাসা থেকে বেরই হতাম না।

একই সমস্যা রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও। সকালে বাসা থেকে বের হয়েই ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক লোকজন। সদরঘাট যাওয়ার জন্য সকাল ৯টায় ধানমন্ডি ১৭ নম্বর বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় করছিলেন রাসেল মিয়া। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, একটা গাড়িতেও উঠতে পারছি না। সবগুলো লোড হয়ে আসছে। এদেশে সব ভোগান্তি গরিবের জন্য।

এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে বেলা দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিএনপির মহাসমাবেশ। সকাল থেকেই সমাবেশে দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১১টার মধ্যেই বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে ভরে যায় সমাবেশস্থল।  

অন্যদিকে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শান্তি সমাবেশ শুরু হয় শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে।

News24bd.tv/AA