প্রেমিকাকে হত্যার ৪৮ বছর পর দায় স্বীকার প্রেমিকের, অতঃপর..

সংগৃহীত ছবি

প্রেমিকাকে হত্যার ৪৮ বছর পর দায় স্বীকার প্রেমিকের, অতঃপর..

অনলাইন ডেস্ক

৪৮ বছর আগে নিজের প্রেমিকাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের অ্যাটর্নির কার্যালয়ের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই ব্যক্তি পুলিশকে বলেছেন, আত্মশুদ্ধির জন্য তিনি ওই হত্যার ঘটনা নিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করা ওই ব্যক্তির নাম রোডনি মেরভিন নিকোলস।

প্রেমিকা জুয়েল ল্যাংফোর্ডকে হত্যার ঘটনায় গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে ফ্লোরিডা কর্তৃপক্ষ ৮১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ল্যাংফোর্ডকে হত্যার ঘটনায় কানাডা পুলিশ নিকোলসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের অ্যাটর্নির কার্যালয়ের নথিতে বলা হয়েছে, কানাডায় এক আইনজীবীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর নিকোলস বলেছেন, মন্ট্রিয়লের বাড়িতে ল্যাংফোর্ডের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। পরে তাকে হত্যার পর তার লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছেন।

সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগে নিকোলস বিভিন্ন সময়ে পুলিশকে মিথ্যা বলেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তবে এবার স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় পুলিশকে তিনি বলেছেন, যা কিছু করেছেন, তা নিয়ে এখন ভাবতে গেলেই তার ভয়ংকর লাগে। তিনি এখন নিজেকে শুদ্ধ করতে চান।

যেভাবে হত্যার শিকার হন ল্যাংফোর্ড
১৯৭৫ সালের এপ্রিলে টেনিসির জ্যাকসনের বাসিন্দা ল্যাংফোর্ড মন্ট্রিয়লে যান। সেখানে নিকোলসের সঙ্গে একটি বাড়িতে ওঠেন তিনি। তখন নিকোলসের বয়স ছিল ৩২ বছর।

১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ল্যাংফোর্ডের বন্ধু-স্বজনেরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। এরপর ওই বছরের জুনে ল্যাফোর্ডের নিখোঁজ থাকার তথ্য মন্ট্রিয়ল পুলিশকে জানান তারই এক বন্ধু।

এর আগে ওই বছরের ৩ মে পূর্বাঞ্চলীয় অন্টারিওর নেশন নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই মৃতদেহ আংশিক নগ্ন ছিল। তার হাত পা টাই দিয়ে বাঁধা ছিল। তার গলায় পেঁচানো ছিল কো অ্যাক্সিয়াল কেব্‌ল তার। একটি কাপড়, তোয়ালে ও একটি টেবিল ক্লথ দিয়ে তার মাথা ঢাকা ছিল।

তখন লাশটির ময়নাতদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গলা চেপে শ্বাস রোধ করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মৃত্যুর আগে তার হাত-পা টাই দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছিল।

নেশন নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ওই মৃতদেহের পরিচয় জানতে অন্টারিও পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত তার পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তদন্তের জন্য ২০১৮ সালে কানাডার কর্তৃপক্ষ কবর খুঁড়ে লাশটি বের করে। নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষা চালানো হয়। পরে ল্যাংফোর্ডের পরিবারের দুই সদস্যের সঙ্গে মৃতদেহের ডিএনএ মিলে যায়।

ল্যাংফোর্ড নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শুরুতে নিকোলসকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখেনি পুলিশ। ২০২১ সালে তারা সন্দেহ করতে শুরু করে। নিকোলস তখন ফ্লোরিডার হলিউডে নথ লেক রিটায়ারমেন্ট হোমে থাকতেন।

২০২২ সালে নিকোলসের জবানবন্দি নেয় পুলিশ। শুরুতে ল্যাংফোর্ড হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। প্রথমে বলেছেন, নেশন নদীতে তাদের নৌকা ডুবে গিয়েছিল। এরপর আবার নিকোলস বলেছিলেন, ল্যাংফোর্ড নেশন নদীতে আত্মহত্যা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেন, ল্যাংফোর্ডকে তার মন্ট্রিয়লের বাড়িতে হত্যা করার পর তার লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন।

নিকোলসের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি তার ডিএনএর সঙ্গে ল্যাংফোর্ডের কাপড় থেকে নেওয়া একটি রক্তের নমুনার মিল খুঁজে পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপর গত জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিকোলসকে বিচারের জন্য কানাডায় ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আগামী সেপ্টেম্বরে শুনানি হবে।

News24bd.tv/AA