ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকা ও ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

বামে কাজী জাফর উল্যাহ ডানে মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)

ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকা ও ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

ফরিদপুর থেকে ফিরে কামরুল ইসলাম:

ফরিদপুর-৪ আসন সদরপুর, ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি।  

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) এই আসনের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পরপর দুই বারের সংসদ সদস্য।

তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবার নির্বাচন করছেন ঈগল প্রতীকে।  

এই আসনে নৌকা ও ঈগলের প্রার্থী একই দলের হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দুই ভাগে  হয়ে বিভক্ত হয়ে গেছেন।

জানা যায়,  তবে এইবার নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আসনে তেমন কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।

 

তবে নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে কাজী জাফর উল্যাহ ও নিক্সন চৌধুরী একে অপরকে কথা দিয়ে ঘায়েলের চেষ্টা করছেন। দুই প্রভাবশালী প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করেছে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ 

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচন ইউনিয়নের চৌরাস্তার মোড় এলাকায় গতকাল শুক্রবার জনসমাগম ছিল বেশি। সন্ধ্যার ৭ টার দিকে একটি চায়ের দোকানের সামনে দেখা গেল মধ্যবয়সী আট থেকে দশজন আড্ডা দিচ্ছেন।  

কাছে যেতে বোঝা গেল, তাঁদের আড্ডার আলোচনার বিষয় নির্বাচন। তাঁরা আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, আগের দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী জিতলেও এবার লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সেখানে জয়লাল মিয়া, বিল্লাল মাতাব্বর, মান্নান মিয়াসহ আড্ডায় থাকা অন্যরা বলেন, আগের দুবার তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন।  

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৫ জন। এ আসনে ২০১৪ সালে নিক্সন চৌধুরী ৯৮ হাজার ৩০০ ভোট এবং ২০১৮ সালে ১ লাখ ৪৪ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে জাফর উল্যাহ ভোট পান ৭২ হাজার ২৪৮টি আর ২০১৮ সালে পান ৯৪ হাজার ২৩৪। তৃতীয় বারের লড়াইয়ে তাঁরা একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় যাওয়ার পথে আ.লীগ নেতাকে ছুরিকাঘাত

বিএনপির একজন নেতার সঙ্গে কথা হয় সদরপুর উপজেলা বাজারে কথা হয় নির্বাচন নিয়ে। দলটি ভোট বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে। প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ওই নেতা বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যাবেন না তারা। নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, বয়স্করা এবার নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। তবে তরুণদের ভোট ঈগলের পক্ষে।

নৌকা ও ঈগলের প্রার্থী একই দলের হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বিভক্ত হয়ে গেছেন। নির্বাচনী এলাকা সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান পক্ষ নিয়েছেন নিক্সন চৌধুরীর। এ কমিটির সভাপতির মৃত্যুতে সম্প্রতি ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ফকির আবদুস সাত্তার ও দুই যুগ্ম আহ্বায়ক আবু আলম রেজা ও রিপন সিকদার কাজী জাফর উল্যাহর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছেন।

সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম নিক্সনের সমর্থক। যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক গুঞ্জর মৃধা নৌকার সমর্থক। তবে এ আহ্বায়ক কমিটির অপর চার সদস্য নিক্সনের পক্ষে কাজ করছেন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এ দুই নেতার পক্ষে কাজ করছে। তবে উপজেলা ছাত্রলীগ জাফর উল্যাহর পক্ষে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় ২৫২ বাংলাদেশিসহ ৫৬৭ অভিবাসী আটক

এই আসনে নৌকা ও ঈগলের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও পাঁচ প্রার্থী। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, নির্বাচনে প্রচার দেখা যাচ্ছে শুধু নৌকা ও ঈগলের। বাকি প্রার্থীদের প্রচার নেই।  

তাঁরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রিন্স চৌধুরী (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আলমগীর কবির (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের নাজমুন নাহার (ডাব) এবং তরীকত ফেডারেশনের মাকসুদ আহাম্মেদ মাওলা (ফুলের মালা)।  

স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রধান দুই প্রার্থীর লড়াইয়ে জাফর উল্যাহর মূল শক্তি হবে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ভোটার। অন্যদিকে নিক্সন চৌধুরীর শক্তি তরুণদের ভোট।

news24bd.tv/কেআই