বনি ইসরাইল অহেতুক প্রশ্ন করে যেভাবে বিপাকে পড়েছিল

প্রতীকী ছবি

বনি ইসরাইল অহেতুক প্রশ্ন করে যেভাবে বিপাকে পড়েছিল

 আবরার নাঈম

প্রশ্ন করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। নিত্যনতুন বিষয় জানার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে। এটা কেন হলো, ওটা কেন হলো না- এ রকম নানা প্রশ্নই মানুষ করে থাকে। প্রশ্ন করা দূষণীয় নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষ প্রশংসনীয়ও বটে।

তাই অহেতুক এবং অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন থেকে বিরত থাকাও আল্লাহর নির্দেশ। যেমন আদেশ রয়েছে না জানা থাকলে জানার জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা প্রজ্ঞাবান তাদের জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জানো। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭)

আর অহেতুক প্রশ্ন ইসলামী বিধানের ক্ষেত্রে আরো মারাত্মক।

অহেতুক প্রশ্ন করে কোনো বিধানকে জটিল করে ফেলা চরম বোকামি এবং নিজের ওপর নিজে বিপদ ডেকে আনার নামান্তর। উদাহরণ হিসেবে বনি ইসরাইলের ঘটনা পেশ করা যেতে পারে।

মুসা (আ.)-এর যুগে বনি ইসরাইলের মধ্যে আমিল নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়। কিন্তু হত্যাকারী কে, তা জানা সম্ভব হচ্ছিল না।

তারা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছিল। আল্লাহ তাআলা প্রকৃত খুনিকে বের করার পদ্ধতি বলে দিলেন। একটি গাভি জবাই করে গোশতের একটি অংশ দিয়ে মৃতের গায়ে ছুঁয়ে দিলে সে জীবিত হয়ে হত্যাকরীর নাম বলে দেবে। সে জন্য আল্লাহ তাআলা বললেন একটা গাভি জবাই করতে। যেকোনো গাভি জবাই করলেই হয়ে যেত।
কী ধরনের গাভি হতে হবে তেমন কিছু বলেননি। কিন্তু তারা করল কী? যত সব অবান্তর প্রশ্ন শুরু করল। গাভির গায়ের রং কী? বয়স কত? এ ধরনের নানা আজগুবি প্রশ্ন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশ্নানুযায়ী জবাব দিতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত গাভির এমন গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো, যা তাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেল। তখন তারা সেই বর্ণনা অনুযায়ী গাভি সন্ধানে বের হলো। অবশেষে তাদের কাঙ্ক্ষিত গাভি পেল এমন এক ব্যক্তির কাছে, যে তার মায়ের খুব সেবাযত্ন করত এবং ব্যক্তি হিসেবে ছিল খুব ভালো। গাভির চামড়াভর্তি স্বর্ণের বিনিময়ে সে তার গাভি বিক্রি করে দিল। বনি ইসরাইলের লোকেরাও সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে সে গাভি ক্রয় করে নিল। অথচ বিষয়টা কিন্তু তারাই কঠিন এবং জটিল বানিয়েছিল। (তাফসিরে উসমানি, সুরা : বাকারাহ)

সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাণী তারা মুখস্থ করে নিতেন তৎক্ষণাৎ। আর যেকোনো বিষয়ে মনে খটকা লাগলে বা অস্পষ্ট থাকলে সর্বোচ্চ আদবের সঙ্গে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন। এবং তাঁরা সব সময় নতুন নতুন বিধান জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। আল্লাহ তাআলা যে বিধান পালনে কোনোরূপ শর্তজুড়ে দেননি সে বিষয়ে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করা সমীচীন নয়। ফলে অনেক সময় সহজ একটি বিষয় অতিরিক্ত প্রশ্নের কারণে কঠিন হয়ে যায়। পরে সেটা পালনের সামর্থ্যও থাকে না বান্দার।

হাদিসে এসেছে, আলী (রা.) বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো : ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে গমনের ক্ষমতা আছে আল্লাহ তাআলার স্মরণে ওই ঘরের হজ করা তার অপরিহার্যভাবে করণীয়,’ তখন সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! প্রতিবছরই কি?’ তিনি নীরব হয়ে রইলেন। তারা আবার বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! প্রতিবছরই কি?’ তিনি বলেন : ‘না, আমি যদি বলতাম হ্যাঁ, তবে তোমাদের ওপর তা (প্রতিবছর) ফরজ হয়ে যেত। ’ তারপর আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন : ‘হে মুমিনরা! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন কোরো না, যা জাহির হলে তোমরা দুঃখিত হবে। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১০১) (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৪; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৪)

এই রকম আরও টপিক