অবাধে পাচার হচ্ছে রিজার্ভের ডলারে কেনা ডিজেল

অবাধে পাচার হচ্ছে রিজার্ভের ডলারে কেনা ডিজেল

অনলাইন ডেস্ক

বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা জ্বালানি তেল টাকায় দেদার পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিজেলের দামের বড় পার্থক্যের কারণে অবাধে পাচার হচ্ছে এই জ্বালানি তেল।

দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকায় কৌশলে পাচারের ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার নজির খুবই কম। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যে বড় ব্যবধানের সুযোগে পাচারকারীরা সক্রিয় রয়েছে। এ জন্য সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।

সোমবার কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেল ৯২.৭৬ রুপিতে বিক্রি করা হয়েছে যা বাংলাদেশি টাকায় ১২৩ টাকা। চেন্নাইয়ে প্রতি লিটার ডিজেলের দর বাংলাদেশি টাকায় ১২৫ টাকা।

মুম্বাইয়ে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৯৪.৩৩ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ১২৫ টাকা। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১০৯ টাকা।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ডিজেলের দামের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১৪ থেকে ১৬ টাকা। দামের এই পার্থক্যর কারণে বাংলাদেশ থেকে ডিজেল পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, চাপ বাড়ছে রিজার্ভে।

অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি (অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা) চালু না থাকায় এবং জ্বালানি তেল ট্যারিফ ভ্যালুতে শুল্ক মূল্যায়ন করে প্রাইসিং করার কারণেই মূলত পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে দরের এমন পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে ডলারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ তেলের চাহিদা বাড়লে ডলারের ওপর চাপ পড়ে। বাংলাদেশের তেল পাচারের অভিযোগ সব সময় ছিল। পাশের দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ না করলে এ অভিযোগ থেকে যাবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘জ্বালানি তেল পাচার অনেক দিন থেকেই হচ্ছে। আগে এটা কম হতো, এখন স্থলবন্দরে অনেক বেড়ে গেছে। সরকার চাইলে পণ্যবাহী ট্রাক যাওয়া এবং আসার সময় জ্বালানি পরীক্ষা করে দেখতে পারে। আরেকটা সমাধান হতে পারে, আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়। এটা সরকারের করার কথা ছিল, তবে এখন পর্যন্ত হয়নি। এসব কারণেই দ্রুত জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার। ’

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদাই ৫০ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকারকে পাঁচ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানিতেই বিপুল পরিমাণ ডলার প্রয়োজন হচ্ছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশে ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ডিজেল পাচারের আশঙ্কা আমরাও করছি। আমাদের তিন পাশে সীমান্ত। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের দামের ব্যবধান থাকলে পাচার ঠেকানো কঠিন হবে। প্রতিবেশী দেশের ট্রাক-লরিগুলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় ট্যাংক ভরে তেল নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। ’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় ডিজেল পাচার ঠেকাতে আমরা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলেছি। বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে খালি ট্যাংক নিয়ে এসে ট্রাক-লরি ট্যাংক ভরে নিয়ে যেতে না পারে। তাদের গাড়ির তেল একেবারেই যদি শেষ হয়ে যায় চেক করে সর্বোচ্চ ২০ লিটার দিতে বলা হয়েছে। ’

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক