মহানবী যে সাহাবির তিলাওয়াত বেশি পছন্দ করতেন

মহানবী যে সাহাবির তিলাওয়াত বেশি পছন্দ করতেন

 সাআদ তাশফিন

মহানবী (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ সাহাবি ছিলেন আবু মুসা আশআরি (রা.)। তাঁর নাম মূলত আব্দুল্লাহ। আবু মুসা ছিল তাঁর উপনাম। ইয়েমেনের আশআর গোত্রের সন্তান হওয়ায় সে গোত্রের দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে আশআরি বলা হয়।

তিনি একাধারে অভিজ্ঞ ফিকহবিদ, মুহাদ্দিস ও চৌকস কূটনীতিবিদ সাহাবিদের অন্যতম ছিলেন। তাঁর দেহাবয়ব ছিল হালকা-পাতলা ও বেঁটে। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৭৮)

কোরআন-হাদিসে তাঁর গভীর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও বিনয় ও ভুল-স্বীকার ছিল তাঁর স্বভাবজাত গুণ। অন্যের জ্ঞানের মূল্যায়ন করতেন খুব বেশি।

একবার জনৈক ব্যক্তি মিরাজের একটা মাসআলা তাঁকেও জিজ্ঞাসা করে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কেও জিজ্ঞাসা করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর ফাতওয়ার বিপরীত ফাতওয়া দিয়েছেন। প্রশ্নকারী বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলে, তিনি একেবারে স্বাভাবিকভাবে বলে দিলেন, এই ব্যক্তি জীবিত থাকতে তোমরা আমার কাছে আসা উচিত নয়। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা : ২/১৩)

অথচ নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় যে ছয় ব্যক্তি ফাতওয়া দেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম ছিলেন।

ইলমি বিষয় নিয়ে জ্ঞানীদের সঙ্গে তর্ক-বাহাস করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ও মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর ইলমি তর্ক-বাহাস হতো। তিনি যে শুধু ইলম অর্জনে পিপাসু ছিলেন তা নয়, ইলম বিতরণেও ছিলেন যথেষ্ট তৎপর। কুফাতে হাদিসের দরসের জন্য তাঁর স্বতন্ত্র হালকা ছিল। তাঁর দরস থেকে বড় বড় মুহাদ্দিস তৈরি হয়েছে।

তাঁর অন্যতম গুণ ছিল, পবিত্র কোরআনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল সুগভীর। রাত-দিন যখনই সুযোগ পেতেন তিলাওয়াত করতেন। তাঁর তিলাওয়াত রাসুল (সা.) খুব বেশি পছন্দ করতেন। রাসুল (সা.) একদিন তাঁর তিলাওয়াত শুনে ইরশাদ করলেন, ‘একে দাউদি কণ্ঠ দেওয়া হয়েছে। ’ একবার তিনি রাতে নামাজের মধ্যে উঁচু আওয়াজে কোরআন পাঠ করছিলেন। নবীজীর স্ত্রীরা তাঁর সুমধুর তিলাওয়াত শুনে জড়ো হয়ে তাঁর তিলাওয়াত শুনলেন। (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৮১)

একবার তিনি প্রায় তিনশত কারি/আলেমকে একত্র করে তাঁদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন। নসিহতের একাংশ ছিল— ‘এই কোরআন তোমাদের জন্য কল্যাণ এবং অকল্যাণও। অতএব তোমরা কোরআনের অনুসরণ করো; কোরআন যেন তোমাদের অনুসরণ না করে। কারণ, যে কোরআনের অনুসরণ করবে, কোরআন তাকে জান্নাতের উদ্যানে নিয়ে পৌঁছাবে। পক্ষান্তরে কোরআন যার অনুসরণ করবে, তাকে ঘাড়ে ধরে জাহান্নামে নিয়ে ফেলবে। (হিলয়াতুল আউলিয়া : ১/২৫৭, সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত জীবন, পৃ. ৫০৪)