সীমান্তে মৃত্যু ঠেকাতে ভারতের অস্ত্রনীতিতে পরিবর্তন

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন।

সীমান্তে মৃত্যু ঠেকাতে ভারতের অস্ত্রনীতিতে পরিবর্তন

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে এখন থেকে মরণঘাতী অস্ত্রের পরিবর্তে মরণঘাতী নয় এমন অস্ত্রের ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) নিতিন আগ্রাওয়াল।

শনিবার (৯ মার্চ) সকালে ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষদিন বিজিবি-বিএসএফ ডিজির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সীমান্তে হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এখন থেকে যৌথ টহল কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ২২ জানুয়ারি যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে বিজিবি সদস্য মো. রইশুদ্দিনের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয়।

তিনি বলেন, আমাদের দুপক্ষেরই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে যাতে করে পোশাকধারী ও সাধারণ নাগরিকদের কেউ যেন সীমান্তে প্রাণ না হারান। কেউ প্রাণ হারাক তা আমরা কেউ-ই চাই না। প্রাণ রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

বিএসএফ মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মাঝেমধ্যে দুই দেশের নাগরিক মারা যায়।

আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে সীমান্তে আর কোনো লাশ না পরে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা আমাদের অস্ত্র সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তন এনেছি। আমরা সীমান্তে মরণঘাতী নয় এমন অস্ত্রের ব্যবহার চালু করেছি। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা।

নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন, সীমান্তে একটি অপরাধী চক্র অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যখনই বিজিবি ও বিএসএফের সদস্যরা চোরাচালান ও আন্তঃদেশীয় অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় বা প্রতিরোধ করে তখনই ওই চক্রের সদস্যরা তাদের ওপর আক্রমণ করে।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে তারা আত্মরক্ষার্থে কখনও কখনও গুলি করে। প্রায় ৬০ জন বিএসএফ সদস্য এই চক্রের হামলায় বা আক্রমণে আহত হয়েছে। এমনকি তাদের সংবেদনশীল অঙ্গে আঘাত বা জখম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হয়। যাতে কিছু বাংলাদেশি ও ভারতীয় অপরাধী আহত ও নিহত হয়।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালান যেমন: মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, জাল মুদ্রা ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তথ্য আদান-প্রদানে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছি। সীমান্তে কোনো হতাহত হোক তা আমরা চাই না।

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহ-কুমিল্লার ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে: সিইসি

ঢাকায় ৫-৯ মার্চ বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে। বিএসএফ মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।

এবারের সম্মেলনে উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হয়।

সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্যমিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন।

উভয় পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক