বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি প্রভাষকের, বহিষ্কারের দাবি আওয়ামী লীগের

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি প্রভাষকের, বহিষ্কারের দাবি আওয়ামী লীগের

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে হিটলারের সাথে তুলনা করে এক প্রভাষক বক্তব্য দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ঘটনাটি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা হারুন অর রশিদ ডিগ্রি কলেজের। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুটক্তিকারী বাংলা প্রভাষক আতাউরের কঠিন শাস্তি ও কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় ৩১ মার্চ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দরখাস্ত দিয়ে ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অত্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. আতিয়ার রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৭ মার্চ বাঙ্গালী জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পাটকেলঘাটা হারুন অর রশিদ ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস চত্বরে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফফার।

প্রথমে তিনি তার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব দেন বাংলা বিষয়ের প্রভাষক (নন এমপিও) মো. আতিয়ার রহমানকে।

আতিয়ার তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে আব্রাহাম লিংকন, লেনসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধি ও উইনস্টোন চার্চিল এর সংগে তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরেন।

তিনি এক পর্যায়ে বলেন, স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালী জাতি ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। তেমনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালী জাতি জাতীয় ও আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে এ দেশে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছেন।

এই বক্তব্যে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন সঞ্চালক বাংলা প্রভাষক আতাউর রহমান। তিনি প্রকাশ্যে মাইক হাতে নিয়ে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে সিনিয়র প্রভাষক আতিয়ার রহমানের ওই বক্তব্যের কাউন্টারে বলেন, শেখ মুজিবকে আব্রাহাম লিংকনের সাথে তুলনা করা হলো কিন্তু আব্রাহাম লিংকনের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কি হিটলারি করা হয়?

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কেন হিটলারি কায়দায় করা হয়? বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এভাবে কটূক্তিমূলক হিটলারের তুলনা করে প্রভাষক আতাউর বিতর্কিত এই বক্তব্য দিতেই শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাঠের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়। প্রভাষক আতিয়ার রহমান সরাসরি প্রতিবাদ করেন।

মুহূর্তের মধ্যে বিষয়টি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও পরে বিষয়টি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামকে শিক্ষকরা অবহিত করলে তিনি ১৯ মার্চ বেলা ১২টায় কলেজে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেন।

তদন্তে তার এমন বক্তব্য সত্যতা মেলে। এ সময় সকল শিক্ষক কর্মচারী ও সাংবাদিকদের সামনে আতাউর রহমান তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

আরও জানা যায়, বাংলা প্রভাষক আতাউর রহমান ওই কলেজ ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। আর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফফার তালা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আতাউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত প্রধান আসামি সাবেক সাংসদ ও ওই কলেজের সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের  ২০০৬ সালে নিবন্ধন বহির্ভূত ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

আর আব্দুল গফফার ১৯৯৪ সালে জামায়াত দলীয় সংসদ সদস্য ও ওই কলেজের সাবেক সভাপতি এ্যাড. শেখ আনসার আলীর প্যাটার্ন (অতিরিক্ত পদে) ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বকাল সর্বোচ্চ ১ বছর হলেও অজানা কারণে আব্দুল গফফার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হস্তান্তরের দু’দফা নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বহাল আছেন।

বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে আতাউর রহমানকে আইনের আওতায় আনতে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি জেলা প্রশাসক সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফফার বলেন, আমি অনেক আগে বিএনপি করতাম, এখন আমি আওয়ামী লীগ করি। অধ্যক্ষ পদে কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমি অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছি। প্রভাষকের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে বলা হচ্ছে তিনি ঐ ভাবে বলেননি।

কলেজেরে সিনিয়র প্রভাষক আতিয়ার রহমান বলেন, ১৭ মার্চের ঘটনা। আজ ৩১ মার্চ। দীর্ঘ ১৩ দিনেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফফার। যে কারণে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি আরও জানান, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল গফফার তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে দীর্ঘ দিন জড়িত ছিলেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তিনি কখনই বিশ্বাস ও লালন করেন না। সেজন্য বাংলা প্রভাষক কলেজের সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি প্রভাষক আতাউরের বিষয়ে তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ তারা দু’জনি রাজনৈতিক আদর্শিক ভাবে বিএনপি’র রাজনীতি করতেন। হিটলারের সাথে তুলনা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা হয়েছে। অবিলম্বে শিক্ষক আতাউরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, প্রভাষক আতাউর হিটলারের সাথে তুলনা করে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সেটি অত্যন্ত ঘৃণিত এবং লজ্জাকর একটি বিষয়। আমি প্রথমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘটনার পর ১৯ মার্চ আমি সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে কলেজে যাই। তদন্তে তার এমন বক্তব্য সত্যতা মেলে। এ সময় সকল শিক্ষক কর্মচারী ও সাংবাদিকদের সামনে আতাউর রহমান তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু আমি ক্ষমা করার কে আমি তো কলেজের কেউ না। তবে এ ঘটনায় বিচার হওয়া উচিত। তাকে অবিলম্বে কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।

প্রভাষক আতাউর রহমান জানান, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি ওইভাবে বঙ্গবন্ধুকে হিটলার বলিনি। আমি যে অর্থে হিটলারের প্রসঙ্গ টেনে এনেছি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক