উপজেলা নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্বাসন

মো. জাকির হোসেন

উপজেলা নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্বাসন

মো. জাকির হোসেন

গোপালগঞ্জের নিভৃতপল্লী টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান নেতা, পিতা, রূপকার, স্থপতি, বঙ্গবন্ধু, বিশ্ববন্ধু নানা অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন। বাঙালি জাতির তিন হাজার বছরের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছেন। এ জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে বাঙালি তাঁকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি অভিহিত করেছে। তাঁকে হত্যার তিন দশক পর বিশ্বব্যাপী জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী নিউজউইক বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি আর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা তাঁকে বাংলার মুকুটহীন সম্রাট বলে আখ্যায়িত করেছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ম্যাকব্রাইড বলেছেন, ‘Bangabandhu Sheikh Mujib was the soul of his nation.’ কেমন করে বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয়ের এমন উচ্চতম আসনে সমাসীন হলেন, যেখানে অন্য কেউই তাঁর সমকক্ষ হতে পারেনি? অতল দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা আর উজাড় করা ত্যাগের অনন্য রাজনৈতিক দর্শন নির্ভরশীল বন্ধু হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে তাঁকে এক বিশেষ উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্বাসনবঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল ভিত্তি বাঙালি ও মানবতার প্রতি অতল ভালোবাসা। ভোগের বিপরীতে ত্যাগের রাজনীতি।

বাঙালি জাতির প্রতি এই অসীম ভালোবাসার কারণেই নিজের ও পরিবারের চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন-সাধকে বিসর্জন দিয়েছেন। পারিবারিক জীবনের কিছু উপলক্ষ থাকে, যখন পরিবারপ্রধানের উপস্থিতির বাইরে মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত ও পরিবারের স্বপ্নকে কোরবানি করেছেন। স্ত্রীর সন্তান জন্মদানের সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে, সন্তানের বিয়ের সময়ও বঙ্গবন্ধু কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি।

দীর্ঘ কারাবাসে পিতৃস্নেহবঞ্চিত সন্তানের কাছে বঙ্গবন্ধু অচিন হয়ে উঠেছেন। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের এবং অন্তরের অন্তস্তলে গুমরে মরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপ দিতে সাহসে, ত্যাগে, শৌর্যে, দার্ঢ্যে লক্ষ্যাভিসারী প্রয়াসে রাজনৈতিক উত্তুঙ্গ মুহূর্তে ঘোষণা করেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’
সাগরের তল পরিমাপ করা যায়, কিন্তু বাঙালির প্রতি, বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা অপরিমেয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে ১০ জানুয়ারির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে আমার সহকর্মীরা আমাকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাঁদের বলেছিলাম, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বিপদের মুখে রেখে আমি যাব না।

মরতে হলে আমি এখানেই মরব। বাংলা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাজউদ্দীন এবং আমার অন্য সহকর্মীরা তখন কাঁদতে শুরু করেন। ’ বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিল বাংলার মানুষের জন্য উৎক্ষের্গিত। তিনি নিজেই বলেছেন সে কথা। সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হোয়াট ইজ ইওর কোয়ালিফিকেশন?’ উত্তরে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল। ’ পরের প্রশ্ন ছিল, ‘হোয়াট ইজ ইওর ডিসকোয়ালিফিকেশন?’ বলেছিলেন, ‘আই লাভ দেম টু মাচ। ’ বঙ্গবন্ধুকে বাঙালিও ভালোবেসেছে হৃদয় উজাড় করে। বাঙালির কাছে তিনি নেতা নন, পরম আত্মীয় ছিলেন। তাইতো বাঙালি বঙ্গবন্ধুর কল্যাণ কামনা করে রোজা রেখেছে, নামাজ পড়েছে, পূজা-প্রার্থনা করেছে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তাঁর Bangladesh State of the Nation বক্তৃতায় বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে বঙ্গবন্ধু দেশপ্রেমে বিহ্বল ছিলেন। দেশপ্রেমের সংজ্ঞাকে যত ব্যাপক করে তোলা যাক না কেন, বঙ্গবন্ধু ততখানিই তাঁর দেশকে ভালোবাসতেন। যে প্রেম তাঁকে বিহ্বল করেছিল, তা দেশের প্রতি যে হালকা আবেগ আমরা অনুভব করি এবং যাকে দেশপ্রেম হিসেবে চালিয়ে থাকি, তার থেকে অনেক বেশি আলাদা। ...পৃথিবীর সেই ছোট্ট অংশটার প্রেমে তিনি বিহ্বল ছিলেন, যার নাম বাংলাদেশ। ’
আগরতলা মামলা থেকে মুক্তির পর বঙ্গবন্ধু সংবর্ধনা সভার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আসামি হিসেবে আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় গ্রেপ্তার করে যখন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাবে, তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে ওরা আমাকে ফাঁসি দেবে। তখন এক টুকরো মাটি তুলে নিয়ে কপালে মুছে বলেছিলাম, হে মাটি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে যদি ওরা ফাঁসি দেয়, মৃত্যুর পরে আমি যেন তোমার কোলে চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে পারি। ’ বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা সহজ-সরলভাবে প্রকাশ করতে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক। ’

বঙ্গবন্ধু শুধু একটি রাষ্ট্রই জন্ম দেননি। পৃথিবীর শোষিত মানুষের জন্য তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক মতবাদও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত এই রাজনৈতিক মতবাদের নাম ‘শোষিতের গণতন্ত্র’। ক্ষুধার্ত, শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুই পৃথিবীর বুকে প্রথম ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ মূলত সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সম্মিলিত রূপ। বঙ্গবন্ধুর ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ মূলত নিপীড়িত কৃষক-শ্রমিক জনতার কল্যাণমুখী গণতন্ত্রেরই পূর্ণ রূপায়ণ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক নিয়মতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীনভাবে রাষ্ট্র শাসন করবে, এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়। সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন, ‘আমরা শোষিতের গণতন্ত্র চাই। যারা রাতের অন্ধকারে পয়সা লুট করে, যারা বড় বড় অর্থশালী লোক, যারা বিদেশিদের পয়সা ভোট কেনার জন্য দেয়, তাদের গণতন্ত্র নয়—শোষিতের গণতন্ত্র। ’ গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে এক অনন্যসাধারণ ভাষণে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা পশ্চিমের সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে না। গণতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেই গণতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে। মানুষের একটা ধারণা আছে এবং আগেও আমরা দেখেছি যে গণতন্ত্র যেসব দেশে চলছে, দেখা যায় সেসব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের প্রটেকশন দেওয়ার জন্য কাজ করে। সেখানে শোষকদের রক্ষা করার জন্যই গণতন্ত্রের ব্যবহার। সে গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই, শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো, আমার দেশের যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে সেসব বন্দোবস্ত করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ রক্ষা পায়; শোষকরা যাতে রক্ষা পায় তার ব্যবস্থা নাই। সে জন্য আমাদের গণতন্ত্রের সাথে অন্যের পার্থক্য আছে। ’

সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘সমাজতন্ত্র গাছের ফল নয়, অমনি চেখে খাওয়া যায় না। সমাজতন্ত্র বুঝতে অনেক দিনের প্রয়োজন, অনেক পথ অতিক্রম করতে হয়। সেই পথ বন্ধুর। সেই বন্ধুর পথ অতিক্রম করে সমাজতন্ত্রে পৌঁছা যায়। সে জন্য পহেলা স্টেপ আমরা গ্রহণ করেছি, শোষণহীন সমাজ। আমাদের সমাজতন্ত্রের মানে শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। একেক দেশ একেক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে। সমাজতন্ত্রের মূলকথা হলো শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই দেশের কী আবহাওয়া, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনোভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সব কিছু বিবেচনা করে ক্রমেই এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে এবং তা আজকে স্বীকৃত হয়েছে। ...’ ওই ভাষণে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। ...মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারো নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারো বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যভিচার—এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। ’

দেশ ও জনগণের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল না। যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ব্যক্তি-পরিবারের লাভ-লোকসান তাঁর বিবেচ্য ছিল না। রাজনীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গাড়ি-বাড়ি এবং আলিশান জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখেননি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ভোগ, বিলাস, ক্ষমতার অংশীদারকে তুচ্ছজ্ঞান করে বাঙালি জাতির ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে বসিয়ে দেননি। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যাও তাঁর পুত্র, কন্যাকে দলের পদ-পদবি কিংবা জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেননি। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভ্রাতাসহ পরিবারের অনেক সদস্যকে দলের নানা পদে বসিয়ে দিয়েছেন। এতেও খায়েশ মেটেনি। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-ভ্রাতা কিংবা অন্য কোনো স্বজনকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। তাঁদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশনা অমান্য করে অনেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের স্বজন উপজেলা নির্বাচন করছেন। যেকোনো মূল্যে নিজের স্বজনকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের ও ভালোবাসার রাজনীতি নয়। এটি পরার্থপরতা নয়, স্বার্থপরতা ও দুর্বিনীত ভোগের-লোভের রাজনীতি। ১৯৭৫ সালে নবনিযুক্ত জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়াই করাপশন নয়। ...নেপোটিজম বা স্বজনপ্রীতিও কিন্তু এক ধরনের করাপশন। আপনারা এসব বন্ধ করুন। স্বজনপ্রীতি ছেড়ে দিলে আপনারা করাপশন বন্ধ করতে পারবেন। আর আজ আমার কাছে আপনারা তওবা করে যান যে স্বজনপ্রীতি করবেন না। ’

দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বজনকে প্রার্থী করার পরের ধাপ হলো মন্ত্রিত্ব বা সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের নির্বাচনে জয়ী করা। এটি শোষিতের গণতন্ত্র নয়; পরিবারতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র কিংবা গোষ্ঠীতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু কিংবা বঙ্গবন্ধুকন্যা কি এমনটি করেছেন? এমন সর্বগ্রাসী স্বার্থপর রাজনীতি দলে বিভক্তি, জনমনে বিরক্তি সৃষ্টি এবং দেশে-বিদেশে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আওয়ামীবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রকে শাণিত করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার অতি কষ্টার্জিত অর্জনকে ম্লান করবে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কিছু লোক যখন মধুমক্ষিকার গন্ধ পায়, তখন তারা এসে আওয়ামী লীগে ভিড় জমায়। আওয়ামী লীগের নামে লুটতরাজ করে। পারমিট নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ থেকে তাদের উত্খাত করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগে থাকার তাদের অধিকার নাই। তাই বলছি, আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে, আত্মসংযমের প্রয়োজন আছে, আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন আছে। ’

প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। এই অনুভূতিকে যারা ধারণ করতে পারেনি, তারা কি আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুসারী? একটি বাংলা গানের কলি, ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না;/হাজার বছর পাশে থাকলেও কেউ কেউ আপন হয় না’। তেমনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করলেই সবাই আওয়ামী লীগার হয় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হয় না।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
zhossain1965@gmail.com

news24bd.tv/আইএএম