রাঙামাটিতে বাহারি ফুলের বিজু উৎসব

ছবি সংগৃহীত

রাঙামাটিতে বাহারি ফুলের বিজু উৎসব

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ‘ফুল বিজু’ মানে ফুলে ফুলে সাজানো। পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বাহারি ফুলের এখন সাজ সাজ রব। শুক্রবার ছিল পার্বত্যা লের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ফুল বিজু উৎসব।  

ভোরের প্রথম প্রহর।

তখন আকাশে সূর্য্য উঠেনি। আবছা আবছা আলোর ঝলকানি দেখা মিলছে। এর আগেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা বন-পাহাড়ে শুরু করেছে ফুল সংগ্রহের বিচরণ। এক টুকরো কলা পাতায়, সাথে পাহাড়ি নানা রঙের ফুল।
সেজেছে আবার নিজেদের ঐতিহ্যবাহি পোশাকে। সাড়ি বেধে তরুণ-তরুণীরা রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে বসেছে প্রার্থনায়। কামনা করা হয় জগতের সুখ-শান্তির জন্য।
 
এরপর গঙ্গাদেবীকে ফুল উৎসর্গ করে তারা। ফুল ফুলে ভরে যায় পুরো কাপ্তাই হ্রদ। এভাবে পুরানো যত গ্লানি মুছে ফুলে ফুলে ভরে যাবে মানুষের মন এমটা বিশ্বাস ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের। এই ফুলবিজু উৎসব চলে সারাদিন ব্যাপী। প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় শুভেচ্ছা বিনিময় করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। এভাবে কেটে যায় ফুল বিজুর আনন্দ উল্লাস।

ফুল বিজুর দিন রাঙামাটি ত্রিপুরা পল্লীতে জমে উৎসবের আসর। ত্রিপুরা তরুণ-তরূনীরা বর্ণাঢ্য সাজে গড়াই নৃর্ত্যসহ, ঘিলা কেলা, গেংখুলী, বোতল ও ও বাঁশ নৃর্ত্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতিয়ে তুলে ফুল বিজুর উৎসব। মুলত বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বৈসাবির উৎসব পালন করে থাকেন।
  
এ উৎসবকে চাকমারা-বিজু, মারমারা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা-বৈসু, তঙ্গ্যারা-বিষু এবং অহমিকারা-বিহু বলে আখ্যায়িত করে। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১লা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা দিন হিসেবে তিনব্যাপী উৎসব পালন করে থাকে।

এবারও রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসনো উৎসব অর্থাৎ ফুলবিজু উৎসবের আয়োজন করেছে বলে জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা। তিনি বলেন। গত ২রা এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে রাঙামাটি বর্ষবরণ উৎসব। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে ফুল বিজু খুবই আকর্ষনীয় একটি উৎসব। এ উৎসব দেখতে বিভিন্ন জেলার মানুষের ঢল নামে পাহাড়ে। সবার উপস্থিতি জমজমাট মনে হয় ফুল বিজু উৎসবটি।

তিনি আরও জানান, শনিবার উদযাপিত হবে মূলবিজু। পাহাড়ি ঘরে ঘরে আয়োজন করা হবে হরেক রকম মুখরোচক খাবার ও পাজান। পর দিন অর্থাৎ রবিবার প্রহেলা বৈশাখ। এরপর মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এ বৈসাবি উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিকতা।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর