‘নূর হোসেন ইয়াবাখোর’ বক্তব্য প্রত্যাহার করলেন রাঙ্গা

অনলাইন ডেস্ক

‘নূর হোসেন ইয়াবাখোর-ফেনসিডিলখোর’ এ বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা। এছাড়াও ওই বক্তব্যের জন্য নূর হোসেনের মায়ের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে।

নূর হোসেনের সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যের পর তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রাঙ্গা।

রাঙ্গা বলেন, গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ের মিলনায়তনে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘরোয়াভাবে আয়োজিত গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় আমার কিছু বক্তব্য নিয়ে কোনো কোনো মহল এবং বিশেষ করে নূর হোসেনের পরিবারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর নূর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে কয়েকটি সংগঠনের আলোচনা, বক্তব্য ও বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। এমনকি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। এর ফলে জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

‘সেই প্রেক্ষিতে কর্মীদের উত্তেজনার মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে, যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত। ’

রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেনের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদও সমব্যাথী ছিলেন। অতএব অসতর্কভাবে বলে ফেলা আমার বক্তব্যে যে আঘাত লেগেছে তার জন্য আমি নূর হোসেনের মায়ের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

‘একই সাথে আমার যে বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সেসব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি আশা করি এই বিষয়ে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না। ’

এর আগে রোববার জাতীয় পার্টির মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান (রাঙ্গা) বলেছিলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেন মাদকাসক্ত ছিলেন। তাঁর দাবি, নূর হোসেন ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিলেন।

সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মসিউর রহমান বলেন, এই নূর হোসেনকে নিয়ে দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করে।

জাপা মহাসচিব বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর। ’ তাঁর দাবি, নূর হোসেনের হত্যার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ বা তাঁর সরকার দায়ী ছিল না। যে ধরনের গুলিতে নূর হোসেন মারা গেছেন, সে ধরনের গুলিও তখন পুলিশ ব্যবহার করত না।

গণতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের অবস্থানের সমালোচনা করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই দুই দলের গণতন্ত্র হলো ফেনসিডিলখোর, ইয়াবাখোর, যারা ক্যাসিনোর ব্যবসা করে তাদের নিয়ে। এরাই হলো দুই দলের কাছে গণতন্ত্রের সোনার সন্তান। জাপা মহাসচিব বলেন, সরকার রাজনীতিবিদেরা কী করছে তা দেখে, কিন্তু ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত যে সম্রাট তাকে এই সরকার, পুলিশ, প্রশাসন কেউ এত দিন দেখেনি। কেননা এই সরকার মনে করে সম্রাটরা যা করে, গণতান্ত্রিক ভাবে করে। রাঙ্গা বলেন, এখন সোনার ছেলেদের ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির ইতিহাস বের হচ্ছে। কিন্তু এত দিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সোনার ছেলেদের দেখেনি, তাদের দৃষ্টি ছিল শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দিকে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)