ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর বাগদাদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। এর পরপরই উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে অন্য দেশের সেনাদেরকেও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ন্যাটো কর্মকর্তা বলেছেন, মিশনের সেনা সদস্যদের ইরাকের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
‘সেনা প্রত্যাহার সাময়িক’ হলেও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে এক ন্যাটো কর্মকর্তা গতকাল বিবৃতি দিয়েছিলেন।
এর আগে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদে' ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন মার্কিন সন্ত্রাসী সেনা নিহত হয়। আহত হয়েছে ২০০ সেনা।
ইরানের সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
বলা হয়, ইরানের নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্রও মোকাবেলা করতে পারেনি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রই মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। আরেকটি সূত্র দাবি করছে, কমপবক্ষ এক ডজনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।
আজ বুধবারের (৮ জানুয়ারি) হামলার আগে মঙ্গলবার রাতে ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বরাতে জানায় দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রেস টিভি।
এদিকে ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার জবাব দিলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও ইসরাইলে হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান।
লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ইরানের হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলা চালায়, তবে তারা ইসরাইলে হামলা করবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
আরেক বিবৃতিতে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানায়, পাল্টা হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে হামলার হুমকি দিয়েছিল ইরান। মঙ্গলবার রাতে ওই দুই ঘাঁটিতে হামলার পর পরই এই হুমকি দেয় ইরান।
বুধবার সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক সংবাদে এ কথা বলা হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রেস টেলিভিশন বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বরাতে জানিয়েছে, ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা স্বীকার করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী।
তারা জানায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র ফের হামলা চালায় তাহলে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং তা হবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
আজকের হামলার ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, অন্তত দুটি বিমানঘাঁটির সেনা আবাসস্থলে এক ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত দুটি বেইজে আক্রমণ করা হয়েছে। যার একটি ইরবিল এবং অন্যটি আল-আসাদে অবস্থিত। এমন খবর প্রচার করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা অবগত আছি।
‘ব্যাপারটি সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়েছে। তিনি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা দলের সাথে পরামর্শ করছেন। ’
ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সকল সহযোগীদের সতর্ক করেছি, যারা এই সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীকে তাদের বেইজ ব্যবহার করতে দিয়েছে। যেসব জায়গা থেকে ইরানকে লক্ষবস্তু করে হামলা হবে, সেখানেই আক্রমণ করা হবে।
আল মায়াদ্বীন টেলিভিশনের এক খবরে বলা হয়েছে, কাসেম সোলেইমানিকে নিজ শহরে দাফনের কয়েক ঘন্টা আগেই আজকের (বুধবার) এই হামলা।
‘প্রথম হামলাটি হয়েছে আলা-আসাদে এবং দ্বিতীয়টি ইরবিলের বিমানঘাঁটিতে। ’
এদিকে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি দেশটির জন্য খারাপ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।
মার্কিন সেনাবাহিনী ইরাক থেকে সৈন্য সরানোর ব্যাপারে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার প্রাক্কালে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য এলো।
এর পরপরই আবার সেটি ভুলবশত পাঠানো হয়েছে বলে বিবৃতি দেয়। ওই চিঠিতে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মার্কিন সৈন্য সরানোর কথা বলা হয়েছে।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)