যেভাবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু থেকে শত্রু

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৬ বছর বন্ধুত্ব ছিল ইরানের

যেভাবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু থেকে শত্রু

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান এখন একে অপরের ঘাঁড়ে গরম নিশ্বাস ছাড়ছে। চরম শত্রুতায় পরিণত এ সম্পর্ক এক সময় ছিল বন্ধুত্বের। দীর্ঘ ২৬ বছর ছিল সেই বন্ধুত্ব। কিন্তু, স্বার্থকেন্দ্রীক বৈশ্বিক রাজনীতিতে সম্পর্কের উত্থান-পতন দিবা-রাত্রির মতো ঘটনা।

আজ দুই দেশের এই মল্লযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ দুই শিবিরে বিভক্ত। উত্তেজনা বাড়ছে অন্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যেও। একনজরে দেখে নিন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের রসায়ন।

১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় মোসাদ্দেক সরকার উৎখাত হওয়ার পর ইরানের ক্ষমতায় আসেন রেজা শাহ পাহলভি।

পরর্বতী ২৬ বছর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ছিল একে অপরের বন্ধু৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক শত্রুতায় রূপ নেয়। ১৯৮০ সালে বন্ধ হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক। এদিকে রেজা শাহের শাসনকালে ইসরায়েলের সঙ্গেও আন্তরিক সম্পর্ক ছিল ইরানের। তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ইরান। ১৯৭৯ সালে খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় ইরানের।   মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলে ইরান। ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ইরান। একইসঙ্গে ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে বলে ১৯৯০ সালের পর থেকে অভিযোগ করে আসছে ইসরায়েল। আর পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি চায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শত্রু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পতন। এ কারণে তাদের লক্ষ্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আস্তানাগুলো। ২০১৮ সালে হিজবুল্লাহ ও তাদের জোট দেশটির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় লেবাননের সরকারে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী আর ফিলিস্তিনের হামাস ইরানের মিত্রশক্তি৷ তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলোর সেনা উৎখাতের জন্য লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে ইরানের চিরশত্রু সৌদি আরব। ১৯৭৯ সালে তেহরানের ক্ষমতায় পরিবর্তন আসার পর থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করে। শুরু হয় দুই দেশের ছায়াযুদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদির দুইটি তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে ইরান রয়েছে বলে দাবি রিয়াদের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইরানে আস্তানা গাড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দখলদারি বজায় রাখে তারা। শাহের শাসনামলেও সম্পর্ক ভাল ছিল না দুই দেশের। এমনকি ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দামকে সহায়তা দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে ১৯৯১ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ইরান হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার।

বেইজিংয়ের অন্যতম অস্ত্র ক্রেতা দেশ ইরান। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে তেহরানকে অস্ত্র সরবরাহ করে চীন। ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও চীন। আর তাই ইরানের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর চীন জানিয়েছে তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ে সম্পর্ক অটুট থাকবে।

এদিকে ইরান ও ভেনেজুয়েলা উভয়ের শত্রু যুক্তরাষ্ট্র। একই শত্রু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটাও বেশ মধুর। ২০০১ সালে ইরানের মোহাম্মদ খাতামি আর ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক এই সম্পর্কের গোড়াপত্তন। আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর তা আরও বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে দুই দেশ কিছু চুক্তিও করেছে।

ইরাকের সঙ্গে আট বছর যুদ্ধ চলে ইরানের। তবে সেই শত্রুতা এখন বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে মধুর সম্পর্ক তেহরানের। দেশটির একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে ইরান। এইসব গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।  

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সফর হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যেমন বাংলাদেশ সফর করেছেন, তেমনি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানিও ঢাকা এসেছেন। দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

সম্পর্কিত খবর