এই বছরের মধ্যেই তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে: শ্রিংলা

এই বছরের মধ্যেই তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে: শ্রিংলা

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সোমবার (০২ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ এবং ভারত: একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভবিষ্যৎ’-শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।

এটা নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। এই বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন- এনআরসি একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা প্রতিবেশী দেশে প্রভাব ফেলবে না।

ভারতের আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই এনআরসি হচ্ছে।

শ্রিংলা বলেন, ঢাকায় আসতে পারা আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারণ ঢাকা আমার কাছে নিজের শহরের মতোই। ঢাকা ও বাংলাদেশের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমি হাই কমিশনার হিসেবে এখানে কাজ করেছি এবং আমার কর্মজীবনের অন্যতম সন্তুষ্টিদায়ক পোস্টিং ছিল এটি। এখানে আসার আগেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে কাজ করার সময়ে অনেকবার আমি এই সুন্দর দেশে এসেছিলাম। সুতরাং পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা আসতে পেরে আমি আনন্দিত।

আরও পড়ুন: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা ঢাকায়

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই মাসে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা এই সফরের প্রত্যাশায় রয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্কের প্রতি অগ্রাধিকার দেন এবং এর চেয়েও বড় কারণ, বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বনন্দিত নেতা এবং বাংলাদেশ ও আমাদের উপমহাদেশের মুক্তির প্রতীক। ভারতে তার নাম বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি বাংলাদেশে যেমন সম্মান লাভ করেন তেমনই ভারতেও সমান শ্রদ্ধার পাত্র। সুতরাং আমি এই জ্ঞানী, নির্ভীক, দৃঢ়প্রত্যয়ী এবং সর্বোপরি এমন একজন বীর যিনি শোষণের হাত থেকে একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই মহান বঙ্গসন্তানের জন্মশতবর্ষে আপনাদের শুভকামনা জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরও জাতীয় বীর। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে যৌথ প্রযোজনায় বিশেষ চলচ্চিত্র নির্মাণসহ জন্মশতবর্ষের বিভিন্ন আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, শুষ্ক মৌসুমে আমাদের পানিসংকটের সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে এবং আমাদের পানি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর, যেন এসব নদীগুলো আগামী প্রজন্মেও জীবিকার উৎস হয়ে থাকতে পারে। এজন্য বিভক্তি সৃষ্টি নয় বরং যা আমাদের বন্ধনকে দৃঢ় করবে সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাংলাদেশের উত্তর–দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখা নৌপথগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধিতে একমত হয়েছি। আমরা আশুগঞ্জ ও জকিগঞ্জের মধ্যবর্তী কুশিয়ারা এবং সিরাজগঞ্জ ও দাইখোয়ার মধ্যবর্তী যমুনা নদীর খনন কাজে একমত হয়েছি যার এক তৃতীয়াংশ ব্যয় ভারত বহন করবে। সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল সম্প্রসারণের পাশাপাশি আশুগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলোর উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছি আমরা।

আরও পড়ুন: এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু: শ্রিংলা

এ সময় বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ, বিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল শেখ মাসুদ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিস চেয়ারম্যান এম ফজলুল করিম প্রমুখ।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফরের সময় সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি একই দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনেরও সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

মঙ্গলবার (০৩ মার্চ)  শ্রিংলা ঢাকা ত্যাগ করবেন। ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি নিয়ে দুইটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকার দায়িত্ব পালন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেন। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন শ্রিংলা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত হওয়ার পরে এটাই প্রথম তার বাংলাদেশ সফর।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল