নাটোরে নির্দেশ অমান্য, তোলা হচ্ছে কিস্তির টাকা

নাটোরে নির্দেশ অমান্য, তোলা হচ্ছে কিস্তির টাকা

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

করোনা ভাইরাসের কারণে নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ জেলায় সকল এনজিওর কিস্তি আদায় স্থগিতের ঘোষণা দেন। এতে দিনমজুর মানুষদের স্বস্তি ফিরে আসে। তবে এই নির্দেশ মানছে না অধিকাংশ এনজিও এর মাঠকর্মীরা। এই নিয়ে ঋণ গ্রহিতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

রোববার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় এ নির্দেশ দেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাটোরে কিস্তির বন্ধের সংবাদ প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসকের ফেসবুক আইডিতে নাটোর জেলার সকল এনজিও কে কিস্তি আদায় না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন করোনা প্রতিরোধে দরিদ্র মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে জেলায় সকল এনজিও’র কিস্তি আদায় স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হলো।

এ নির্দেশনা জারির পর থেকে অন্তত পক্ষে অর্ধশত জেলাবাসী তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের টাইমলাইনে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ এর ছবি শেয়ার করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছেন।

এদিকে নাটোরের জেলা প্রশাসকের অনুরোধের পরও এনজিওগুলো তাদের কিস্তি আদায় অব্যাহত রেখেছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি এনজিও'র নাটোর কার্যালয়ের মাঠে কর্মীরা তাদের এনজিওর ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে এক প্রকার জুলুম করে কিস্তির টাকা আদায় করছে।

এক ঋণগ্রহীতা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এরপরও এনজিওগুলোর মাঠকর্মীদের চাপ ও
অত্যাচারে অতিষ্ঠ ঋণগ্রহীতা।

তবে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেছে (আরআরএফ) এনজিও কর্মী মিজান।

তিনি বলেন, তাদের কোনো গ্রাহককে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা হয় না। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শহরের তেবাড়িয়া
এলাকায় গিয়ে দেখা যায় উত্তরা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সোসাইটি (টউচঝ) এবং রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরআরএফ) মাঠকর্মীরা কোনো প্রকার সাবধানতা অবলম্বন করে ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মী নিয়ে উঠান বৈঠক করে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে।

১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে সবচাইতে বেশি বিপদে পড়বেন নিম্ব আয়ের লোকজন। যারা দিন চলেন দিনের আয় দিয়েই। বিশেষ করে, সিএনজি, বাস ও রিকশাচালক, চা বা ফল ও সবজি বিক্রেতা, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ইত্যাদি। এরকম একটা
দুর্যোগপূর্ণ সময়েই কিস্তি আদায়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না অধিকাংশ মানুষ। শহরের রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। এতে করে বিপাকে পড়েছে শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

নাটোর পৌর শহরের রিক্সা চালক তেবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ মজিদ মিয়া বলেন, তাঁর পরিবারে ৮ জন সদস্য। প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র কিস্তি দিতে হয় ১৪শ টাকা।

তিনি বলেন, বর্তমানে শহরে মানুষ কমে গেছে এখন তার আয় নাই। কি করে সংসার চলবে আর এনজিওর কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করবে এ নিয়েই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিয়মিত কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো।

এই জন্য কারোনা প্রাদুর্ভাব না কাটা পর্যন্ত এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরআরএফ) শাখার ম্যানেজার মমিনুল হক জানান, কিস্তি আদায় বন্ধে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি তাই আমরা যথারীতি মাঠে কাজ করছি। আর জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানতে আমার বাধ্য নয়। আমার প্রতিষ্ঠান আমাকে কিস্তি বন্ধের নির্দেশ দিলে আমি শুনব ।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর