পোশাক খাতে বাংলাদেশের ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল

পোশাক খাতে বাংলাদেশের ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল

অনলাইন ডেস্ক

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ২১ লাখ শ্রমিক। ইতোমধ্যে ১০ লক্ষাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকের চাকরি হুমকির মুখে পরেছে।  

বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন  বিজিএমইএ সোমবার এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংগঠনটি জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় একের পর এক ফরমায়েশ বাতিল বা স্থগিত  করছে বিদেশি ক্রেতারা। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮টি কারখানা থেকে বাতিল হয়েছে ক্রয়াদেশ। যেখানে পোশাকের পরিমাণ প্রায় ৯১ কোটি পিস।

এদিকে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় বন্ধ  হয়ে  গেছে বেশ কিছু কারখানা।

কয়েক লক্ষ পোশাক শ্রমিককে  ছুটিতে পাঠানো হয়েছে কোনো ধরণের বেতন-ভাতা ছাড়াই।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইন জানান, এ সংকট মোকাবেলায় সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি বরাদ্দ ঘোষণা করেছে, সেখানে শ্রমিকের  বেতন পরিশোধকেই প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বিজিএমইএ’র সদস্য ছাড়াও ছোট বা মাঝারি কারখানা যারা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তাদের শ্রমিকদেরও এ আপদকালীন সহযোগিতার মধ্যে আনতে হবে।  

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সার্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারারর্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সামনে যে ভয়াবহ আর্থিক সংকট আসছে তা কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে সেটাই এখন মূল চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

তবে তিনি আশা করেন, এ সংকট কেটে এ বছরের শেষ নাগাদ হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সে পর্যন্ত টিকে থাকতে হলে সরকারের আর্থিক সহায়তা আরো বাড়াতে হবে এবং  রাজস্ব বিভাগ,  ব্যাংক, বীমা ও সেবা খাতকে সমন্বিত  সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।  

উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং নিট পণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ মিলে দেশে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৩ হাজার ২০০, বাকি ৮০০ কারখানা বিকেএমইএর সদস্য। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং রপ্তানি আদেশ না থাকার কারণে ৩ হাজার ৯ শতাধিক পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ক্রয়াদেশ না আসা পর্যন্ত এসব কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক-পক্ষ।  

এ অবস্থায়ও শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে । অনেক কারখানা  মালিকই তার পোশাক কারখানা সচল রাখছেন কারণ এসব কারখানার ক্রয়াদেশ বহাল আছে। আবার কিছু কারখানা রয়েছে যেগুলো করোনা নিরোধক  সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে  ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমিকের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে সে সব কারখানা সচল রাখা  হচ্ছে।  

এদিকে , বাংলাদেশের জন্য একটি স্বস্তির খবর হচ্ছে যে, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা (জিএসপি) বহাল রাখার পক্ষে মত  দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।  

শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন  চারটি সংগঠন ২০১৬ সালে ইইউ এর ন্যায়পাল কার্যালয়ে বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে প্রশ্ন তুলে জিএসপি সুবিধা বাতিলের আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু ইইউ ন্যায়পাল কার্যালয়ের তদন্তে কোনো ত্রুটি যায়নি। চার বছর পর গত ২৪ মার্চ ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যায়পাল কার্যালয়।  

সংস্থাটি জানায়, শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়নে বেশ ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করেছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে, তা ইউরোপীয় কমিশন থেকেই নেওয়া হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর