মসজিদের কারপার্ক এখন মর্গ

মসজিদের কারপার্ক এখন মর্গ

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

করোনাকালে বার্মিংহাম স্মলহিথের একটি মসজিদের কার পার্ককে পরিণত করা হয়েছে মর্গে। বার্মিংহামের গোল্ডেন হিলক রোডের সেন্ট্রাল জামে মসজিদ গামকুল শরিফের এই অস্থায়ী মর্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কয়েক ডজন কফিন। এখানে প্রায় দেড়শ লাশ সংরক্ষণ করা যাবে। এই কার্যক্রম চালাতে স্বেচ্ছাসেবীদের মসজিদ কর্তৃপক্ষই অর্থায়ন করছে।

এছাড়া করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিদিনই চার-পাঁচটি করে লাশ দাফন ও শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে মৃতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্থায়ী মর্গটি সব ধর্মাবলম্বীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

অ্যালাম রকের ইসলামী জানাজা পরিচালক জিয়াউল কুরআন জামেয়া মসজিদের সহযোগিতায় অস্থায়ী এই মর্গটি পরিচালনা করা হচ্ছে। হাসপাতাল বা বাড়ি থেকে মৃতদের কেউ ফোন করলেই লাশ গ্রহণ করে মর্গে নেওয়া হয়।

তারপর মরদেহের গোসল দিয়ে কফিনে সংরক্ষণ করা হয়।

ইসলামী রীতিনীতি অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব দাফন সম্পন্ন করা হয়। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মেনে চলতে জানাজার পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন মসজিদের পরিবর্তে কবরস্থানে জানাজা করা হচ্ছে। প্রতিটি জানাজায় মাত্র ছয়জনের অংশগ্রহণের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে।

মর্গের একজন স্বেচ্ছাসেবী মুনির হোসেন জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে তারা এখানে জানাজার আগে কেবল ছয়টি মরদেহ রাখতেন। কিন্তু এখন সেটা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কোভিড-১৯ এর পরে আমরা পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্রিজ ভাড়া নিয়েছি। যার প্রত্যেকটিতেই ২৫ থেকে ৩০টির মতো লাশ সংরক্ষণ করা যায়। এখন আমাদের প্রায় দেড়শ মরদেহ সংক্ষরণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আমাদের আশপাশে প্রায় ৫০টি ক্যাসকেট স্টোরেজও রয়েছে।

তিনি বলেন, মহামারীটি আঘাত হানার পর থেকে মসজিদে দিনে চার থেকে পাঁচজনের বেশি সংখ্যক জানাজা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আমরা সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মেনে চলি। প্রতিটি জানাজায় ছয়জন অংশ নিতে পারেন এবং দশ মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়।

মুনির বলেন, আমরা সত্যিই জানি না কতদিন এটা চালু রাখতে হবে। তবে যতদিন এই সংকট চলবে ততদিন এটা চালু থাকবে। এছাড়া এটা কেবল মুসলমানদের জন্যই নয়, সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। মর্গের পরিচালনায় ছয়জন বেতনভুক্ত রয়েছেন, বাকীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যাদের মধ্যে চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন। আমরা যতটা সম্ভব সঠিকভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, মসজিদের নিজস্ব সম্পদ থেকে মর্গটি পরিচালনায় সম্পূর্ণ অর্থায়ন করা হচ্ছিল। পরে কমিউনিটির লোকজন পিপিইসহ অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য অনুদান দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, এখন কমিউনিটির চেতনা উচ্চতর। সবাই এখন এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। আমরা এই মহামারী থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আপনি যে বিশ্বাস বা সাংস্কৃতি পটভূমিরই হোন না কেন, নির্বিশেষ আমরা আজ একই কাতারে। এখন আমাদের সবার একসাথে কাজ করা উচিত। আমরা নিশ্চিত সবাই এগিয়ে আসবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর