করোনার কারণে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ের আনারস

করোনার কারণে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ের আনারস

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

এ বছরও পাহাড়ে আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চাহিদা কম, মিলছে না দাম। করোনার কারণে কালো ছায়া নেমে এসেছে আনারসের বাগানে। বসছে না হাট।

নেই ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা। একে বারে ক্রেতা শূণ্য আনারসের হাট। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আনারস। অথচ, গত বছরও ঠিক এ সময় পাহাড়ে উৎপাদিত টসটসে, রসালো ও মিষ্টি আনারস দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে সয়লাব হয়েছিল।

কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস বাগানে রয়ে গেছে। লোক সংকটের কারণে কাটা হচ্ছে না বাগানের আনারস।

একই সাথে পরিবহণ সংকট তো রয়েছেই। তাই আনারস নিয়ে অনেকটা বিপাকে স্থানীয় কৃষকরা।

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাঙামাটিতে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর পাহাড়ি ঢালু জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। যা প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯.২ মেট্টিক টন। রাঙামাটির পাহাড়ের সব স্থান পাকা আনারসের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু রাঙামাটিতে নয়, আনারসের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে অপর দু’পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। কিন্তু ফলন বেশি হলেও লাভের মুখ দেখছে না চাষীরা। সংরক্ষণের অভাবে, সঠিক সময় করা হচ্ছে না বাজারজাত। তাই পঁচে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার কষ্টের ফল।

রাঙামাটির কুতুকছড়ি ও সমতাঘাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে- প্রতি হাজার আনারস পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় থেকে তিন হাজার টাকায়। পাহাড়ি জেলাগুলোতে কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় এবং দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও লকডাইনের কারণে এ বছরও আনারস স্থানীয় বাজারে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষীদের পাশাপাশি লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরও। এসব আনারস বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকায়। আবার অনেক সময় ২ থেকে ৩টাকায় মিলছে এ আনারস।

স্থানীয় আনারস চাষী ধন কুমার চাকমা জানান, চলতি বছর আনারসের উচ্চফলন হয়েছে রাঙামাটিতে। তাই মৌসূমের আগেই বাজারে এসেছে আনারস। কিন্তু তাঁরপরও পাহাড়ের প্রান্তিক চাষীদের ভাগ্য পরিবর্তনের হচ্ছে না। কারণ করোন দূর্যোগের কারণে আনারসের বাজার মিলছে না। ক্রেতা শূণ্য বাজারে আনারস বিক্রি করা সম্ভব না।

তাই সংরক্ষণের অভাবে কষ্টের ফল নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় আর এক আনারস চাষী আজগর আলীর।  

তিনি বলেন, হিমাগার না থাকায় পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দরে। ন্যায্য দর
হতে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই পার্বত্যাঞ্চলে মৌসূমী ফল সংরক্ষণ ও কৃষকদের স্বার্থে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, গেলো বছরের তুলনায়, এ বছর ২ হেক্টর জমিতে বেশি আনারস চাষ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাহাড়ি জেলাগুলোয় ব্যাপক আনারসের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। তবে আনারসের প্রচুর ফলন পেয়েও দিশেহারা স্থানীয় চাষীরা।

কারণ স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ, বাজারজাত করণ ও পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে পার্বত্য এলাকায় উচ্চ ফলনশীল আনারস চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রতি বছর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চাষীরা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর