‌‌‘আম্পানের ক্ষতি বুলবুলের ‘৩ গুণ’

‌‌‘আম্পানের ক্ষতি বুলবুলের ‘৩ গুণ’

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে গতবছরের ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের চেয়ে ৩ গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে। এমন তথ্য ফুটে উঠেছে আম্পানে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গঠিত চারটি কমিটির প্রতিবেদনে।

আম্পানের তাণ্ডবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে ২১ মে চারটি কমিটি করে দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কমিটিগুলো রোববার বিকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে।

সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, এবার আম্পানে বনের ১২ হাজার ৩৫৮টি গাছ ভেঙেছে। বন বিভাগের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে অন্তত ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার।

২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বন বিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলেরর বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খাঁন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরবনকে সময় দিলে সিডর, আইলা ও বুলবুলের আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মত করেই আম্পানের ক্ষয়ক্ষতিও কাটিয়ে উঠবে।

এ প্রসঙ্গে খুলনাস্থ  সুন্দরবন ওয়াচ গ্রুপের আহবায়ক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মে সুন্দরবন তার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের কাজ হবে বনকে রক্ষা করা। সেটা বেআইনী কাঠ সংগ্রহকারীদের কবল থেকেই হোক বা প্রকৃতি বিধ্বংসী কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমেই হোক। কারণ সুন্দরবন আবারো দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে শক্তিশালী ঝড়কে বুক পেতে ঠেকিয়ে দিয়ে দেশকে ব্যাপক জীবন ও সম্পদহানি থেকে রক্ষা করেছে।

উল্লেখ্য, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান গত ২০ মে  সন্ধ্যায় প্রচন্ড গতিতে সুন্দরবনে আঘাত হানে। সে সময় এ ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ছিল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। এরপর রাতে প্রবল বৃষ্টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।

এ দুর্যোগে মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে অন্তত ২৩ জনের প্রাণ যায়। প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। উপকূলের বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন বুক পেতে ঢাল হয়ে ঝড়ের গতি কমিয়ে না দিলে জানমালের ক্ষতি হত আরও অনেক বেশি। এক যুগ আগে ঘূর্ণিঝড় সিডরও আছড়ে পরেছিল সুন্দরবনের উপর যা রক্ষা করেছিল উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই ঝড়ে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অনেক বেশি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে অনেকখানি সামলে ওঠে সুন্দরবন। গতবছরের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলও এসেছিল একই পথ ধরে, তখনও ঢাল হয়ে ঝড় ঠেকিয়ে দিয়েছিল এই সুন্দরবন।

এবারের আম্পানে সুন্দরবনের বাঘ, হরিণসহ অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতির তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবন নিজে থেকেই বুলবুলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে। আম্পানের ক্ষয়ক্ষতিও সুন্দরবন নিজেই কাটিয়ে উঠবে। আমাদের কেবল বন বিভাগের প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোগুলো মেরামত করতে হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর