ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় দৃশ্যমান হয়নি ফোরলেন প্রকল্পের কাজ
নোয়াখালী চৌমুহনী-সোনাপুর ফোরলেন সড়ক

ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় দৃশ্যমান হয়নি ফোরলেন প্রকল্পের কাজ

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

তিন বছর অতিবাহিত হলেও নোয়াখালীর চৌমুহনী-সোনাপুর সড়ক ফোরলেনে উন্নিতকরণ কাজের অর্ধেকও দৃশ্যমান হয়নি। সড়ক বিভাগ বলছে, শুধুমাত্র ভূমি অধিগ্রহণ না করায় অনেকটাই থমকে গেছে সড়কের উন্নয়ন কাজ। ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ চৌমুহনী থেকে সোনাপুর পর্যন্ত চার লাইন উন্নতি করণ প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ জন্য সড়ক বিভাগ দুষছে জেলা প্রশাসনকে।

আর জেলা প্রশাসন দিচ্ছে আইনী জটিলতার দোহায়। অপরদিকে বিদ্যুৎবিভাগের গাফিলাতির কারণেও সড়কের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুটি সরানো হয়নি।

news24bd.tv

সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক চার লাইন উন্নতিকরণ প্রকল্প শুরু হয়। ৯৬২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২১ সাল পর্যন্ত।

এরই মধ্যে প্রকল্প মেয়াদের তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন অর্ধেক কাজ দৃশ্যমান হয়নি। যার কারণে সোনাপুর-বেগমগঞ্জ প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে রাখা ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এবং মেকাডম করা অংশে বর্ষায় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে আছে। এতে বর্ষায় যানবাহন চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া প্রতিনিয়ত ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটে ঘটেছে। শুল্ক মৌসুমে ধূলাবালিতে চারপাশ একাকার হয়ে থাকে।

সরেজমিনে জেলা শহরের প্রধান সড়কের রশীদ কলোনী থেকে উপজেলা পরিষদ ও দত্তের হাট এলাকায় দেখা যায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে আছে। এসব এলাকায় বৃষ্টির পানি এবং কাদায় একাকার হয়ে আছে সড়ক। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুটি অপসারণ করা যাচ্ছে না।

প্রকল্পের নোয়াখালী গেইট থেকে সোনাপুর পর্যন্ত অংশে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন রয়েছে। এসব জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পের শুরুতেই সড়ক বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসনকে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়াতে এ অংশে কোন কাজই শুরু হয়নি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরাও।

নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম সামছুদ্দিন জেহান বলেন, ‘দুর্ভাগ্য তিনটি বছর পার হয়ে গেলে ও চার লাইন প্রকল্পের কাজে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। ভূমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না। যার কারণে মানুষের দুর্ভোগও শেষ হচ্ছে না। সড়কের কোনো কোনো  জায়গায় গর্ত করে রাখা হয়েছে। কোথাও দিনের পর দিন নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কাজ শুরুর কোন লক্ষণই  নেই। দ্রুত কাজটা যেন ভালোভাবে শেষ করা হয় এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ’

নোয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, প্রকল্পের কাজে ধীরগতির দায় সড়ক বিভাগের নয়। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া সড়কের যে অংশ রয়েছে সে অংশের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ের তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১৩ কিলোমিটার কাজের মধ্যে ৭ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মাইজদী বাজার থেকে সোনাপুর পর্যন্ত অংশে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব  পাঠিয়েছি। সেই প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই বাচাই কমিটি গ্রহণ করে। এরপর দুই বছর আগে সড়ক বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসন এখনো পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি। যার কারণে এ অংশের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করে দিলে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারবো। ’ স্থানীয়রা জানান, বিগত জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস যথাসময়ে ভুমির অধিগ্রহনের জটিলতা নিরসন করেন নি এজন্য কাজের ধীরগতি।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কথা স্বীকার করে নবাগত নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খাঁন বলেন, ‘নোয়াখালীর সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হচ্ছে চার লাইনের কাজ। এখানে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটা দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে, আমরা দ্রুত কাজটা শেষ করবো। শ্রেণী পরিবর্তন জটিলতার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ ব্যাপারে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটি খুব দ্রুত তাদের প্রতিবেদন জমা দিবে। ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ’

সব রকমের জটিলতা দূর করে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত চার লাইন উন্নিত করণ প্রকল্পের কাজ সময় মতো সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী।

নিউজ টোয়েন্টিফোর / সুরুজ আহমেদ

সম্পর্কিত খবর