ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফর, উদ্দেশ্য কী?

ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফর, উদ্দেশ্য কী?

অনলাইন ডেস্ক

বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার এমন একটি বিষয় যা আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রাখে তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি কৌশলগত আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তারেও ভূমিকা রাখে। এ অঞ্চলে ইরান ও তার বন্ধু প্রতিম দেশগুলোর সামরিক কর্মকর্তাদের সফর বিনিময় এ জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল তেহরান সফর এসে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামির সঙ্গে এক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

আরও পড়ুন:

আফগান-তালেবান আলোচনা: দোহায় তালেবানদের প্রতিনিধি দল

ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাক্ষাতে প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তার করা ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, মাদক চোরাচালান রোধ, অভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করা, যৌথ সামরিক মহড়া প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার বিস্তারের পেছনে ইরানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। এ লক্ষ্যে ইরান এর আগে ওমান সাগর ও ভারত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এ প্রসঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের যৌথ সামরিক মহড়ার কথা উল্লেখ করা যায়।

আরও পড়ুন: ভূমধ্যসাগরে তেল গ্যাস উত্তেজনা: গ্রিসকে হুমকি তুরস্কের

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিজ্ঞান ও গবেষণা ক্ষেত্রে দু’দেশের সামরিক সহযোগিতা জোরদার, অভিজ্ঞতা বিনিময়, জলদস্যু ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তথ্য আদান-প্রদান এবং এ অঞ্চলের দীর্ঘ পানিসীমায় নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেছেন ইরানের কর্মকর্তারা যেটাকে ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা স্বাগত জানিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ ধরনের সামরিক সহযোগিতা এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এ কারণে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফরকে ভূকৌশলগত এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: 

নাইজারে ৭১ বেসামরিককে হত্যার অভিযোগ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে

বর্তমানে জ্বালানি বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ইরান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বজায় রয়েছে। এছাড়া ইরানের চবাহার বন্দর ব্যবহারের জন্য ইরান, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারে ভারতের আগ্রহ থেকে বোঝা যায়, মধ্যএশিয়া ও ককেশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থাৎ তেহরান ও নয়াদিল্লির মধ্যকার সহযোগিতার গুরুত্ব কেবল এ দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এটি বহুপক্ষীয় সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলবে। তাই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও এ দু'দেশের মধ্যকার সহযোগিতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মডার্ন ডিপ্লোমেসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত ও ইরানের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে এবং অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার জন্য এ দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামী ইরান এ অঞ্চলের স্বাধীন ও বন্ধুপ্রতিম সব দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বিস্তারে আগ্রহী এবং এ কারণে হরমুজ প্রণালী ও ওমান সাগর অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ অবস্থায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ইরান সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

আরও পড়ুন: পরমাণু সহযোগিতায় একমত ইরান ও রাশিয়া

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর