পাকিস্তানি বাবার অগ্নিপরীক্ষা: উইঘুর পুত্র আটক ও কন্যাদের ধরে এতিমথানায় পাঠিয়েছে চীন

পাকিস্তানি বাবার অগ্নিপরীক্ষা: উইঘুর পুত্র আটক ও কন্যাদের ধরে এতিমথানায় পাঠিয়েছে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজান মাসটা বিশেষভাবে পালন করতে চেয়েছিলেন বাবা সেকান্দার হায়াৎ। সেলক্ষ্যে তিনি এবং তার কিশোর পুত্র আরাফাত চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়েন। নিজ দেশ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে সীমান্তও অতিক্রম করেন। এ যাত্রায় ছিল পিতা-পুত্রের আরো কাছে আসার, একত্রে থাকার অভিপ্রায়।

কিন্তু সে আশা দুরাশায় পরিণত হয়। যা শেষ হয় চোখের জলে। পরিবারের সদস্যদের একে অপরের থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষাদের গল্পের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন:


হাজারো মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে চীন


বাবা-ছেলে দুজনেই পাকিস্তানে তিন সপ্তাহের মতো ছিলেন।

আর এর মধ্যেই চীনের জিনজিয়াং এ ফিরে যেতে তাদের কাছে ফোন আসে। আটক করা হয়, জাতিগত ভাবে উইঘুর হায়াতের মাকে। বাবা এবং ছেলে সীমান্তে আসতেই, সেখান থেকে উইঘুর আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে চীনা পুলিশ। এ সময় গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, পাকিস্তানে এই কয়েকদিন তারা কি করেছেন তা জিজ্ঞাবাদের জন্য এই আটকের করা হয়েছে তাদের।

এ সময় পুলিশের প্রতি হায়াতের বিনীত আর্জি, ”আমাদের আলাদা করবেন না দয়া করে। ” বাবা বললেন, দয়া করে আমার সামনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি চুপ থাকবো। আর আমার ছেলে যা বলবে সব সত্যি কথা বলবে। ”

’আপনার ছেলে এক সপ্তাহের মধ্যে ফিরে আসবে”। ২০১৭ সালের ঐদিন পুলিশ এমন আশ্বাসই দিয়েছিল আরাফাতের বাবাকে। অথচ আরাফাত বাবা সেকান্দার হায়াত তাঁর ছেলেকে হারিয়েছিলেন ২ বছরের জন্য।   

শুধু হায়াত নয়, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে এমন শত শত সংখ্যালঘু মুসলিম শি জিন পিং সরকারের নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার। বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিগতভাবে প্রায় ১ কোটি উইঘুরের বাস। যাদের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদে টইটুম্বুর বিস্তির্ণ এই অঞ্চলটিতে ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর ও সংখ্যালঘু মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।  

আরও পড়ুন:


চীন অস্ত্র দিচ্ছে পাকিস্তানকে, তা ছেয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরে!


আর উইঘুরদের ওপর চীনের এই নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। পৌঁছেছে সীমান্ত পর্যন্ত।   যার বলি হচ্ছেন পাকিস্তানের পোশাক ব্যবসায়ী সেকান্দার হায়াতের মতো বহু মুসলিম। কারণ  দুইদেশের রাজনীতি ও উচ্চাবিলাসের বলি হয়েছেন হায়াত এবং তার স্ত্রী। এসব রোষানলের কারণে সেখানেই ৩টি সন্তানের জন্ম দিতে হয়েছে তাদের।

দ্যা টাইমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ৪ পাকিস্তানি জানান, তারা উইঘুরকে বিয়ে করেছেন ঠিকই তবে তাদের একত্রে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। একত্রে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী হুমকি দেয়। এমনকি এক চীনা উইঘুর পালিয়ে পাকিস্তানে চলে আসলে, ডিটেইন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। তাই উভয় দেশের পক্ষ থেকে হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে, তাদের পরিচয় গোপন রাখতে দ্যা টাইমসের কাছে অনুরোধ জানান তারা।

আরও পড়ুন:


লিবিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৩, বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ২২


সেকান্দার হায়াত বলেন, কারাগারের চেয়েও নিকৃষ্ট একটি স্থানে নিজের সন্তানদের রেখে আসা যে কি কষ্টের তা বলে বুঝানো যাবে না। তার স্ত্রী এবং আরাফাত সেখানে ২ বছর আটকে রাখা হয়েছিল। তখন আরাফাতের বয়স ছিলো ১৯ বছর। আর এ দুই বছর সেকান্দার হায়াতের চীনের ভিসাও বাতিল করা হয়েছিল। তার সেকান্দারের দুই কন্যা, সেসময় যাদের বয়স ছিল  ৭ ও ১২ বছর তারাও রক্ষা পায়নি চীন সরকারের বরর্বতার হাত থেকে। এই শিশুদেরও বাবা সেকান্দারকে না জানিয়ে চীনের কাশঘরে একটি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।  

 আসলে হায়াতের কাহিনী প্রমাণ করে কতো কঠোর ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করে শি জিন পিং সরকার। সামান্য মত বিরোধও মানতে নারাজ তাঁর প্রশাসন। হতে পারে তা দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে। এমনকি অসংখ্য পাকিস্তানি মুসলিম চীনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরেও পাক সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। কারণ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী চীনের কাছে পাকিস্তানের মতো অনেক দেশ অর্থ সহায়তা নিচ্ছে। এমনকি শি সরকারের কাছ থেকে এরই মধ্যে কোভিডের ভ্যাকসিন আবিস্কার হলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছেন তারা। তাই হায়াতের মতো বহু উইঘুর নির্যাতনের কাহিনী অনেকটা নীরবে চাপা পড়ে যাচ্ছে, শি সরকারের রাজনৈতিক কুট কৌশলের কাছে।

 

news24bd.tv কামরুল