তওবা কি, কেন করবো ও গুরুত্ব

তওবা কি, কেন করবো ও গুরুত্ব

অনলাইন ডেস্ক

আমরা জেনে বুঝে বা নিজের অজান্তেই অনেক ভুল ত্রুটি করছি প্রতিনিয়ত তাই আমাদের উচিত মহান আল্লাহ এর দরবারে আত্মসমর্পণ করে তওবা করা। আমাদের অনেকেরই হয়তো ভালোভাবে জানা নেই তওবা কি, কেনই বা করবো ও এর গুরুত্ব। আসুন জেনে নেয়া যাক...

তওবা একটি আরবি শব্দ যার অর্থ প্রত্যাবর্তন, ফিরে আসা। কোরআনের সূরা ৬৬ আয়াত ০৮-তে তওবা শব্দটি ′নাসূহ (نصوح) শব্দ সহকারে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ খাঁটি।

সুতরাং, তওবার প্রকৃত তাৎপর্য হল আন্তরিক অনুশোচনা।

আমরা যখন কোনো পাপ কাজ করার দ্বারা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ’র কাছে শরণাপন্ন হই তখনই তাকে তওবা বলে।

তওবার দ্বারা কবিরা গুনাহ মাফ হয়। যে তওবার দ্বারা পাপ কর্মের পুনরাবৃত্তি হয় না তাকে বলে তোবাতুন নিসহাবা বা খাটি তওবা।

কেন তওবা করবো?

আমাদের মৃত্যুর পর মিযানে আমলের দাড়িপাল্লা মাপা হবে। যার পাপের পাল্লা ভারি হবে সে জাহান্নামি হবে। এই ভয় মনে থাকতে হবে। তবেই পাপ থেকে দুরে থাকা সম্ভব। তাই জাহান্নাম এর আযাব থেকে বাচতে আমাদের প্রতিনিয়ত আল্লাহর দরবারে তওবা ইস্তেগফার করতে হবে।

তওবার শর্ত

ইসলামী শরীয়ত মতে, বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। অবশ্য সেটা হতে হবে আন্তরিক। আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে – যদি কোনো ব্যক্তি তার কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত না হয় বা তা পরিত্যাগের ইচ্ছা না করে। তাহলে তার মৌখিক তওবা উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।

মৌখিক তওবা প্রকৃত তওবা নয়। আন্তরিক তওবার কিছু শর্ত রয়েছে। হযরত আলী (রা.) কে তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন তওবা হল ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি:

# নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া
# অনাদায়ী ফরয/ওয়াজিব ইবাদতসমূহ আদায় করা
# অন্যের সম্পত্তি/অধিকার নষ্ট করে থাকলে তা ফেরত দেয়া
# শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চওয়া
# ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা
# আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা

তওবার গুরুত্বঃ

কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা তওবা। এছাড়া সূরা নুর, সূরা তাহরিম, সূরা বাকারা, সূরা ফুরকানসহ কুরআনের আরও অনেক স্থানে তওবা এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।

“আর হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। ”— কুরআন, সূরা ২৪ (আল-নুর), আয়াত ৩১

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সমীপে খাঁটি তওবা কর, এই আশায় যে তোমাদের প্রভু তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে এমন উদ্যানসমূহে উপবিষ্ট করবেন যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত থাকবে…”— কুরআন, সূরা ৬৬ (আল-তাহরিম), আয়াত ৮

কুরআনে আল্লাহ অবিশ্বাসী ও অবাধ্য (কাফির) দেরকে সম্বোধন করে বলেছেন যে, তারা যদি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তবে আল্লাহ তাদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন।


আরও পড়ুন: নামাজ অবহেলাকারীর ১৪টি শাস্তি


“কিয়ামত দিবসে তার (অবিশ্বাসী, অবাধ্য) শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে,- কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, এইরূপ লোকেদের জন্য আল্লাহ পাপের পরিবর্তে পুণ্যসমূহ দান করবেন, আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল পরম করুণাময়। আর যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকর্ম করে তবে তো সেই ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্যভাবে) রূপান্তরিত হয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে। ” — কুরআন, সূরা ২৫ (আল-ফুরকান), আয়াত ৬৯-৭১

তাই চলুন আজ থেকেই আল্লাহর শরনাপন্ন হয়ে গুনাহ থেকে মুক্তির পানাহ চাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুক।

news24bd.tv সুরুজ আহমেদ