অনন্ত জলিলকে গালি দিতে গিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে কথা বলা ঠিক না

অনন্ত জলিলকে গালি দিতে গিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে কথা বলা ঠিক না

শরিফুল হাসান

একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না। এই যে অনন্ত জলিলকে গালি দিতে গিয়ে তার শরীর, পোশাক বা তার স্ত্রীকে নিয়ে কথা বলছেন সেগুলোও কিন্তু অসুস্থ মানসিকতা। মনে রাখবেন অন্যায় দিয়ে কখনো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হয় ন্যায় দিয়েই।

হুম, ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী বলে অনন্ত যে কথা বলেছে সেটা হয়তো আপনাকে আমাকে আহত করেছে। কিন্তু বিশ্বাস করেন যত না বেশি লোক আহত হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি লোকে সেই বিশ্বাসই ধারণ করে যেটা অনন্ত জলিল বলেছে। তাদের কাছে অনন্ত জলিল আরো জনপ্রিয় হলো। হিরো হলো।

আর অনন্ত সেটাই চেয়েছে। মার্কেটিং জিনিসটা তিনি দারুন বোঝেন।

ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন এই যে ফেসবুক ইউটিউব, ওয়াজ মাহফিলে সারাক্ষণ নারীকে যাচ্ছেতাইভাবে গালিগালাজ করা হয়, সবকিছুর জন্য নারীদের দায়ী করা হয়, এমনকি ধর্ষণের জন্যও তাদের পোশাক কে দায়ী করা হয় কেন সেটা করা হয়?

এই কারণেই করা হয় যে এই কথাগুলো বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে। এই দেশের বেশির ভাগের মানুষের মনে যে এই কথাগুলোই বাজে। বলেন তো এসব কথা বলার জন্য কবে কার বিরুদ্ধে কি শাস্তিটা হয়েছে? হয়নি; কারণ আমরা সংখ্যালঘু। আর তারা সংখ্যাগুরু। ‌ সে কারণেই তাদের কিছু হয় না।

শোনেন, যে দেশে দুই বছরের একটা শিশুও ধর্ষণ বা বলাৎকারের শিকার হয় সেখানে যে পোশাকের সম্পর্ক নেই এটি বুঝতে অনেক বুদ্ধিমান হওয়া লাগে না। যেটা লাগে সেটা হচ্ছে বিবেকবোধ। আর সেই বোধটাই আমরা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি।

আমি জানি না এখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী। আমি জানি না আশার আলো কোথায়। তবে এটুকু জানি অন্যায় দিয়ে কখনো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটুকু জানি নিজের বোধগুলো কখনো হারাতে দিতে নেই। এটুকু জানি লড়াইটা কখনো থামিয়ে দিতে নেই।  

তবে সেই লড়াইটা আগে নিজে শুরু করতে হয়। এরপর পরিবার সমাজ বা রাষ্ট্রে। আফসোস আমার নিজেরও ঠিক হই না। আর রাষ্ট্রেও সুশাসন আসে না। ফলে সুন্দর আগামীর আশায় আমাদের অপেক্ষা কখনো শেষ হয় না। তবু স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে যাই। যদি কোনদিন আলো আসে।

শরিফুল হাসান, উন্নয়ন কর্মী।

আরও পড়ুন: যে পোস্ট করে বয়কট অনন্ত জলিল

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর