আমার লেখা একটি গল্পের বই পড়ে কলকাতার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বলল, ‘বইটির শেষ পাতায় একটা গ্লসারি থাকলে ভালো হতো।
শুনে আমি অবাক। বললাম-- বাঙালি পাঠকের জন্য বাংলায় লেখা বইয়ে গ্লসারি থাকবে কেন?
তারপর কথোপকথন এই ভাবে চললো।
--্কিছু শব্দ তো বাঙালি পাঠকরা বুঝবে না, সে জন্য বলছিলাম।
--কোন কোন শব্দ বুঝবে না?
--খালা, দোযখ. . .
--বলতে চাইছো বাঙালি হিন্দুরা বুঝবে না ওই শব্দগুলোর অর্থ? বাঙালি মুসলমানরা তো মাসি, নরক এই শব্দগুলোর অর্থ বোঝে। হিন্দুরা বুঝবে না কেন? ওরা তো হাজার বছর ধরে এক ভূমিতে বাস করছে মুসলমানের সঙ্গে। এই শব্দগুলো মুসলমানের মুখ থেকে এতকাল শোনেনি?
--না, বাঙালিরা জানে না এইসব শব্দ।
আরও পড়ুন: অপুকে তসলিমা নাসরিনের পরামর্শ
--না জানা তো গর্বের কথা নয়, বরং লজ্জার কথা।
--বলছিলাম. . .
--বাংলা ভাষায় প্রচুর বিদেশি শব্দ আছে, আরবি ফার্সি ইংরেজি পর্তুগীজ। এক কালে কলকাতার কোর্টের ভাষা ফার্সি ছিল। বাইরে থেকে যত শব্দ ঢুকবে ভাষায়, ভাষা তত সমৃদ্ধ হবে। কুয়োয় সাঁতরে আনন্দ নেই, সমুদ্রে সাঁতরাতে হয়।
--কী বললে, ফার্সি শব্দ বাংলা ভাষায় আছে? কোন শব্দ? আমরা বলি?
আরও পড়ুন: বেশ করেছেন নুসরাত: তসলিমা নাসরিন
--ও তুমি বলতে চাইছো বাঙালি হিন্দুরা বলে কি না? হ্যাঁ নিশ্চয়ই বলে। আওয়াজ, আজাদ, আতশবাজি, জায়গা, চাকরি, দেরি, দোকান, বাগান, রোজ, পছন্দ, চশমা, পর্দা, রাস্তা, কাগজ, আবাদ, আমদানি রপ্তানি, আরাম, আসর, আস্তানা, আস্তাবল, আস্তে, কারখানা, কারচুপি, কারিগর, কিনার, কুর্নিশ, হিন্দু, শিশি, হরেক, হাঙ্গামা, হুঁশ এরকম হাজারো শব্দ।
--বল কী?
--সেটাই।
--এত মুসলিম শব্দ বাংলা ভাষায়, বিশ্বাস হচ্ছে না।
--শব্দের বা ভাষার কোনো ধর্ম নেই। কোনো শব্দই মুসলিম বা হিন্দু শব্দ নয়। ভাষা অঞ্চল ভিত্তিক। একই অঞ্চলে বাস করা নানা ধর্মের, সংস্কৃতির লোক এক ভাষায় কথা বলে। পারস্য দেশে মুসলিম আসার আগে থেকেই ফার্সি ভাষাটি ছিল। আরবি ভাষাটিও আরবেরা মুসলমান হওয়ার আগেও ছিল। বাংলা ভাষাটি বাংলায় বাস করা হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান সব বাঙালিরই।
আরও পড়ুন: ধর্ম নিয়ে যা বললেন তসলিমা নাসরিন
লেখক: তসলিমা নাসরিন (ফেসবুক থেকে)
news24bd.tv তৌহিদ